পুলিশ সদস্যের দায়ের কোপে কৃষকের কব্জি বিচ্ছিন্ন

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ১৭:৩০

ছবি : বাংলাদেশের খবর
গাজীপুরের শ্রীপুরে বন বিভাগের জমিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক পুলিশ সদস্যের ধারালো দায়ের কোপে এক কৃষকের বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার বরমী ইউনিয়নের তাঁতি সুতা (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামের শেখবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের পাঁচ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ এবং গাজীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহতরা হলেন- তাঁতি সুতা (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামের মৃত হাবিজ উদ্দিনের ছেলে কব্জি বিচ্ছিন্ন হওয়া কৃষক হযরত আলী শেখ (৬৫), তার ছোট ভাই নাসির উদ্দিন শেখের স্ত্রী জাহানারা (৬৫)।
অন্যরা হলেন- একই গ্রামের মৃত রাম দুলাল বিশ্বাসের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল অমৃত চন্দ্র বিশ্বাস (৫২), তার বড় ভাই অমূল্য চন্দ্র বিশ্বাস (৬২) ও তার মেয়ে কলেজ শিক্ষার্থী সঙ্গীতা বিশ্বাস (১৭)। পুলিশ কনস্টেবল অমৃত চন্দ্র বিশ্বাস টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানায় কর্মরত রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানান, তাঁতি সুতা (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামের কৃষক হযরত আলী শেখ ২০২৪ সালে বন বিভাগের থেকে লিজ নিয়ে সেখানে গাছের চারা রোপণ করেন। কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষের লোকজন একই গ্রামের মৃত রাম দুলাল বিশ্বাস গাছের চারা রোপণে বাধা সৃষ্টি করলে বন বিভাগ দ্বিতীয় পক্ষের ব্যক্তিদের নামে মামলা করে। এরপর প্রথম পক্ষের লোকজন পুনরায় ওই জমিতে গাছের চারা রোপণ করলে দ্বিতীয় পক্ষের লোকজন বাধা সৃষ্টি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকালে একই গ্রামের মৃত রাম দুলাল বিশ্বাসের ছেলে পুলিশ সদস্য অমৃত চন্দ্র বিশ্বাস লোকজন নিয়ে জমি চাষের জন্য গেলে প্রথম পক্ষের লোকজন বাধা প্রদান করেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য অমৃত চন্দ্র বিশ্বাসের দা দিয়ে কোপ দিলে কৃষক হযরত আলী শেখের বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কব্জি বিচ্ছিন্ন হাত নিয়ে তিনি সঠিক বিচারের দাবিতে থানায় হাজির হন।
হযরত আলী শেখের ছোট ভাই নাসির উদ্দিন শেখ জানান, দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগের জমি তারা ভোগ দখল করে চাষাবাদ করে আসছেন। ওই জমি নিয়ে বন বিভাগের সঙ্গে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। প্রতিপক্ষ অমূল্য চন্দ্র বিশ্বাস ওই জমি তাদের বলে দাবি করে আসছে। মঙ্গলবার এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য অমৃত চন্দ্র বিশ্বাস হাতে থাকা দা দিয়ে কোপ দিলে হযরত আলীর বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে মাটির পড়ে যায়। স্থানীয়রা দুই জনকে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হযরত আলীর ভাতিজা শাকিল আহমেদ সবুজ জানান, দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগের জমি তার জেঠা ভোগ দখল করে চাষাবাদ করে আসছেন। ওই জমি নিয়ে বন বিভাগের সঙ্গে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
পুলিশ কনস্টেবল অমৃত চন্দ্র বিশ্বাসের ভাতিজি কবিতা বিশ্বাস বলেন, ‘আমার চাচা সকালে জমিতে চাষ করতে যায়। এ সময় কৃষক হযরত আলী ও তার স্বজনেরা আমার চাচাকে মারধর করে। তার চিৎকার শুনে আমরা দৌড়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে যাওয়ার পর এক পর্যায়ে কৃষক হযরত আলী ও তার লোকজন আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের তিনজন আহত হয়েছেন। পরে তাদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে শ্রীপুর রেঞ্জের শ্রীপুর সদর বিট কর্মকর্তা আলাল উদ্দীন জানান, ‘তাঁতি সুতার ওই জায়গা বন বিভাগের। জমিটা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। বন বিভাগ গত বছর কিছু গাছের চারা রোপণ করেছে।’
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুদেব চক্রবর্তী বলেন, ‘হযরত আলী নামে এক কৃষকের বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
আতাউর রহমান সোহেল/এমআই