Logo

সারাদেশ

সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যাচেষ্টা

নরসিংদীতে মিল্টন সিন্ডিকেটের ৩ ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক ও নরসিংদী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ১৮:৫১

নরসিংদীতে মিল্টন সিন্ডিকেটের ৩ ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার

ছবি : সংগৃহীত

নরসিংদীর পলাশে চাঁদা না দেওয়ায় সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সোমবার (১২ মে) কক্সবাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার র‌্যাব-১৫।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল পলাশের খানেপুর বাজারে সার কারখানার সামনে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন- ঘোড়াশাল পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঘোড়াশাল পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব আরিফ ও পলাশ উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব পাপন বাদশা।

পলাশ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, গ্রেপ্তার তিনজনই পলাশ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন ভুঁইয়া মিল্টনের রাজনীতি করেন। তারা ‘মিল্টন সিন্ডিকেট’-এর সদস্য হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুন

  • মঈন খানের ‘পিএস’র পেটে পলাশের মিল-কারখানা

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে থাকা তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি মঙ্গলবার (১৩ মে) বাংলাদেশের খবরকে নিশ্চিত করেছেন পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন ও র‌্যাব-১১ এর সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান।

ওসি মনির হোসেন বলেন, সোমবার আসামিদের গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাদের এখনো থানায় হস্তান্তর করেনি।

র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর সাদমান বলেন, ওই তিন আসামিকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৫। আসামিদের আনতে পুলিশের একটি টিম কক্সবাজার যাচ্ছে। পথে আছে। 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ আমান, আরিফ ও পাপন বাদশা দীর্ঘদিন ধরে সাবেক সেনা সার্জেন্ট মোজাম্মেল হকের পরিবারের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। গত ২ এপ্রিল খানেপুর বাজার থেকে বাসায় ফেরার পথে সার কারখানার সামনে পথরোধ করে চাঁদা দাবি করে আমান।

এজহারে আরও বলা হয়, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আরিফ ও পাপন বাদশা তার দুই হাত ধরে রাখে আর আমান মোজাম্মেলের কপালে হত্যার উদ্দেশ্যে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কোপ দেয়। এছাড়াও চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন তিনি। এখনো কোপের সেই ক্ষত নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মোজাম্মেল। এ ঘটনায় পলাশ থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা করেন তিনি। যার নম্বর-০৪।

মোজাম্মেল ও তার পরিবার জানায়, মামলা করায় তারা আরও বেশি চাপে পড়েন। মামলার পর থেকেই মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করতে থাকে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা। মোজাম্মেলের বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে ফোন করে মামলা উঠাতে ও আসামিদের মুক্ত করতে চাঁদা না দিলে তার গর্ভের একটি সন্তান হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। ওই কল রেকর্ডও বাংলাদেশের খবরের সংগ্রহে রয়েছে।

এরই মধ্যে মামলার ২ নম্বর আসামি আরিফের গ্রেপ্তারের আগের একটি রেকর্ডে বলতে শোনা যায়, ‘পিস্তল কিনেছি ২০টা, ৫০ লাখ টাকা দিয়ে, শটগান ৩টা’।

স্থানীয়রা জানান, তাদের কর্মকাণ্ড আর হুমকি-ধমকিতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। সিএনজি-ট্যাম্পুস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে পলাশ-ঘোড়াশালের বিভিন্ন বাস-ট্রাকস্ট্যান্ডের দখলসহ মিল-কারখানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বিএনপির দাবি, মিল্টন সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হন মোজাম্মেল। ৫ আগস্টের পর মিল্টন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মুখ খোলার মতো কেউ নেই। যারাই কিছু বলতে চেয়েছে তাদেরই পরিণতি সেনা কর্মকর্তা মোজাম্মেলের মতো হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও কেউ কেউ তাদের গ্রেপ্তারের ছবি পোস্ট করে লিখছেন ‘পলাশ উপজেলা ছাত্রদল মঈন খানের আদরে ও ছত্রছায়ায় পলাশের শীর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদকব্যবসায়ী ও অস্ত্রধারী জমিদখল, টেন্ডারবাজি, পাপন বাদশা, আরিফ, আমানউল্লাহ আমান গত রাতে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে’।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান ও পলাশ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিল্টনের সঙ্গে একই ফ্রেমে ওই তিন আসামির ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে, একই দিন বিকেলে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে পলাশ উপজেলা ছাত্রদল ও ঘোড়াশাল পৌর ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা।

মিছিল শেষে তারা অভিযোগ করেন, ‘মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায়’ তাদের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত মামলা প্রত্যাহার করে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান ছাত্রদল নেতারা।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্টের পর থেকেই পলাশে দখল ও চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ উঠে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিল্টনের বিরুদ্ধে। সার কারখানা থেকে শুরু পলাশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব মিল-কারখানাতেই কাজের নামে চাঁদাবাজি চলছেই। পুরাতন সার কারখানার পরিত্যক্ত মালামালও টেন্ডারের পণ্য পরিবহনের আড়ালে হচ্ছে হরিলুট। এসব নিয়েও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশের খবর।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর এসব নিয়ে তদন্তে নামে সরকারের বিভিন্ন মহল।

এনএমএম/এসআর/এআরএস/ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর