চারাগাঁও শুল্কস্টেশনে সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ১০:৪৬

ছবি : বাংলাদেশের খবর
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ শুল্কস্টেশন চারাগাঁও এলসি পয়েন্টে ৮২ কোটি টাকার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, এ সড়ক যথাযথ উচ্চতায় না করায় প্রতি বছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে কয়লার ডিপোগুলো ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী অবশ্য বলছেন, কাজ ডিজাইনের বাইরে করার সুযোগ নেই। তবুও খোঁজ নিয়ে দেখবেন বিষয়টি তারা।
কারেন্টের বাজার—মধ্যনগর সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় তাহিরপুর সীমান্তের অন্যতম শুল্কস্টেশন চারাগাঁও এলাকায় ১৩ কিলোমিটার অংশে কাজ করছে সিলেটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল লিমিটেড। ৮২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের সবচেয়ে জরুরি অংশ চারাগাঁও শুল্কবন্দর এলাকা। ওখানে প্রায় ২০০ আমদানিকারকের কয়লার ডিপো রয়েছে। মেঘালয় থেকে আমদানি করা কয়লা এখানকার ডিপোতে রেখেই সারাদেশে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।
সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি চারাগাঁও অংশে সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার ও চারাগাঁও বন্দরে জিরো পয়েন্টে ভারতীয় ট্রাক নামার যে সড়ক হচ্ছে তা নিচু করে ব্যবসায়ীদের জন্য বিপদ তৈরি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ওখানকার ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই শুল্কস্টেশনের একাধিক আমদানিকারক বলেন, সড়কের ডিজাইন করার সময় কিংবা এখন কাজ করার সময় তাদের সঙ্গে কেউ কথা বলেননি। প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে ব্যবসা করে সরকারকে রাজস্ব দেন তারা। অথচ সরকারের কোটি কোটি টাকা বরাদ্দের কাজ যেনতেনভাবে করার চেষ্টা হচ্ছে।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক সমিতির চারাগাঁও শাখার কোষাধ্যক্ষ মাওলানা খায়রুল বাশার বলেন, চারাগাঁও শুল্কবন্দরের ওপর দিয়ে সীমান্ত সড়কের কাজ হচ্ছে। এখানকার জিরো পয়েন্ট থেকে যে পথ চারাগাঁও ডিপোতে এসেছে, ওই পথের একটি অংশ অপেক্ষাকৃত নিচু করে করায় তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। শুল্কবন্দরের সিরাজের দোকান থেকে হেকিমের দোকান পর্যন্ত অংশ নিচু করায় বেশি বিপদ হবে তাদের। ওদিক দিয়ে ঢল নেমে সকল ডিপোর কয়লা ভেসে যাবে। সড়ক এ ডিজাইনে হলে শুল্কবন্দরে ব্যবসা করা কঠিন হবে।
চারাগাঁও আমদানিকারক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সামছুল হক বলেন, ভারতের মেঘালয়ের নলজুরি, নকলাম ও পুলাং থেকে বাংলাদেশের তাহিরপুর সীমান্তের চারাগাঁও বন্দরে কয়লা নামে। জিরো পয়েন্ট থেকে যে পথ দিয়ে কয়লা নামে, সেই পথে আরসিসি সড়ক হচ্ছে। সড়কের ডিজাইন করার সময় স্থানীয় অভিজ্ঞদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি। আমরা মনে করি, সড়ক নিচু করে অর্থ লুটপাটের ধান্দা করা হচ্ছে।
চারাগাঁও আমদানিকারক সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ বলেন, সড়ক উঁচু না করলে, এটি যানবাহন ও মানুষের চলাচলের পথের বদলে ছড়া হয়ে গলার কাঁটা হবে। ডিপোতে মজুত করা কয়লা পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাবে। সড়কের দুই পাশে উঁচু রেখে করা হচ্ছে গার্ডওয়াল, সেখানেও নিম্নমানের ইট লাগানো হচ্ছে। স্থানীয় বিওপি ক্যাম্পের দায়িত্বশীলরাও বলেছেন, এটা ঠিক হচ্ছে না, তারাও ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি জানাবেন।
সিলেটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল লিমিটেড এ কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী শফিউল আলম বলেন, আমরা ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করছি। ডিজাইন পরিবর্তন করতে হলে এলজিইডির দায়িত্বশীলদের করতে হবে। দু’চারটা ইট হয়তো খারাপ গেছে। তবে আমরা ভালো ইট লাগানোর চেষ্টা করছি। এখানে অনিয়মের কিছু হয়নি।
তাহিরপুর এলজিইডির প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ডিজাইনের বাইরে কাজ করার সুযোগ নেই। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো কী হচ্ছে।
ডিজাইন করার সময় এলাকাবাসীকে না ডাকায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা কেন আগে কথা বলল না, যোগাযোগ করল না?
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, আরসিসি সড়ক নিচু করতে হয়। এটি সাবমার্জেবল থাকে। এখানেও তাই হচ্ছে। এখন এলাকাবাসী যা দেখছে, কাজ শেষ হতে হতে আরও দুই ফুট উঠে যাবে। ইটসহ অন্যান্য বিষয়ে অনিয়মের ব্যাপারে তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানান।
আব্দুল হালিম/এমবি