অর্থ সংকটে বন্ধ হয়ে গেল উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতাল!

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ১৭:৫৭

কক্সবাজারের উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতাল।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত কক্সবাজারের ‘উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ অর্থ সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার হাজারো মানুষ। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সেবাপ্রার্থীরাও।
জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাইয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালটি চালু হয়। পরে দাতা সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের মাধ্যমে এটি আরও আধুনিক রূপে পরিচালিত হচ্ছিল। বিনামূল্যে দেওয়া হতো মাতৃস্বাস্থ্য, দন্তরোগ, চক্ষুরোগ, ফিজিওথেরাপি, ল্যাবরেটরি টেস্টসহ বহুবিধ চিকিৎসাসেবা। জরুরি বিভাগ ছিল ২৪ ঘণ্টা চালু।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক এনজিও’র সহায়তায় পরিচালিত এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন শত শত মানুষ চিকিৎসা গ্রহণ করতেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থায়ন না পাওয়ায় হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
এনজিও সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ ও উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসক মো. শাহিনুর জানান, আপাতত অর্থসংকটের কারণে হাসপাতালের কার্যক্রম সোমবার থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন হাসপাতালটির কাজকর্ম গুছিয়ে নিচ্ছি। ১৪ মে-এর মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। যদি পরবর্তীতে সরকার বা দাতা সংস্থা ইউএনএইচসিআর বা অন্য কোনো সংস্থা অর্থায়ন করে, তাহলে হাসপাতালটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হবে।
উখিয়া উপজেলার থাইংখালি গ্রামের বাসিন্দা সাবেকুন্নাহার বলেন, উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতালে বিনামূল্যে ভালো চিকিৎসাসেবা পেতাম। এখন হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
উখিয়া রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান বলেন, স্পেশালাইজড হাসপাতালটি আমার ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে। এ হাসপাতালে নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যসহ অনেক ধনী লোকও চিকিৎসা নিতে যেতেন। কারণ ওখানে ভালো চিকিৎসাসেবা পাওয়া যেত। উখিয়া, টেকনাফ ও পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত লোকজনও এ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসতেন। এখন এটি অর্থসংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এ হাসপাতালের শুরুতে আমি বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছিলাম। এটি বন্ধ হওয়ায় প্রতিদিন শত শত লোক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শরণার্থী কমিশনার, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতি উখিয়া স্পেশালাইজড হাসপাতালটি পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ওই হাসপাতালে অনেক দামি দামি জিনিসপত্র রয়েছে। সেগুলো রক্ষার জন্য নিরাপত্তা জোরদার করা দরকার। তা না হলে দামি জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, অর্থসংকটের কারণে স্পেশালাইজড হাসপাতালটি গত সোমবার থেকে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এটি আপাতত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তারাই হাসপাতালের কার্যক্রম পুনরায় চালু করবেন।
তিনি বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের জনগণ ও রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালটির কার্যক্রম চালু রাখা প্রয়োজন। দাতা সংস্থাগুলো যেন কোনো ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে মানবিক বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়।
ইমতিয়াজ মাহমুদ ইমন/এমবি