গৃদকালিন্দিয়া কলেজে সভাপতি পদে লড়াই : লায়ন হারুনের মনোনয়ন স্থগিত

আলআমিন ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁদপুর
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ১৬:২৯

ছবি : বাংলাদেশের খবর
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংকিং ও রাজস্ব বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য লায়ন মো. হারুনুর রশিদকে মনোনীত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে তার এ মনোনয়ন নিয়ে শুরু হয় জটিলতা ও বিরোধ।
সূত্র জানায়, গত ৩১ মার্চ কলেজের বিদ্যমান এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম ড. শামছুল হক ভূঁইয়ার স্ত্রী ডা. আনোয়ারা হক। তিনি ছয় মাসের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ১৫ মার্চ তিনি পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি প্রস্তাবনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই প্রস্তাব গৃহীত না করে ২৪ এপ্রিল মো. হারুনুর রশিদকে নতুন সভাপতি হিসেবে মনোনীত করে কলেজে চিঠি পাঠায়।
এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌরী রানী সাহা উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করলে আদালত হারুনুর রশিদের মনোনয়ন স্থগিত করে। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, বর্তমানে কলেজের সভাপতির যাবতীয় কার্যসম্পাদনের দায়িত্ব পেয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক।
সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ও দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন সভাপতি হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর গত (৭ মে) মো. হারুনুর রশিদ কলেজে যান এবং সেখানে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন না। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৈঠকের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর সভাপতি হারুনুর রশিদ অধ্যক্ষ গৌরী রানী সাহাকে অব্যাহতি দিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. দেলোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন।
এ বিষয়ে নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সভাপতি নিয়োগ দিয়েছেন বলেই আমি যোগ দিয়েছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। নিয়ম মেনে হয়েছে কি না, সেটা সভাপতি বলতে পারবেন।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। সভাপতি (৭ মে) এসে বললেন অধ্যক্ষ পরিবর্তন হবে। পরদিন আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগের অধ্যক্ষের কক্ষ বন্ধ থাকায় নতুন রেজুলেশন বই এনে সভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
এদিকে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি চলাকালীন হারুনুর রশিদকে কলেজ সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন না দেওয়াকে কেন্দ্র করে তার অনুসারীরা কলেজ চত্বরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
তারা কলেজের সামনে মানববন্ধন, ক্যাম্পাসে ভাঙচুর, অধ্যক্ষের কক্ষে হামলা, শিক্ষককে লাঞ্ছিত এবং এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে গুরুতর আহত করে বলে অভিযোগ উঠে। এসব ঘটনার প্রতিবেদন স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌরী রানী সাহা বলেন, ‘শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণে আমি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হই। আদালত আমার রিটের শুনানি শেষে ২৮ এপ্রিল হারুনুর রশিদের মনোনয়ন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ভাইস চ্যান্সেলর, রেজিস্ট্রার ও কলেজ পরিদর্শকের কাছে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা এবং দাপ্তরিক কাজে জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘উচ্চ আদালতের আদেশের কপি আমি পেয়েছি।’
মো. হারুনুর রশিদের সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি। ফলে তার বক্তব্য এ প্রতিবেদনে যুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এআরএস