Logo

সারাদেশ

মাদক কারবারের অর্থে আরাকান আর্মির ভারী অস্ত্রের জোগান

Icon

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১৮:৩৯

মাদক কারবারের অর্থে আরাকান আর্মির ভারী অস্ত্রের জোগান

ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে লড়াই করে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইনের ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা দখলে নিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মংড়ু টাউনশিপ দখলের পর মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার অংশে ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা এখন আরাকান আর্মির দখলে। 

আর এই দীর্ঘ সীমান্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশে মাদকের কারবার শুরু করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। মাদক কারবারের টাকায় মজুদ করা হচ্ছে ভারী অস্ত্র। ভারত ও চীন সীমান্ত দিয়ে আসা এসব অস্ত্রের মজুদ পার্বত্য চট্টগ্রামকে বড় হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

জানা গেছে, মিয়ানমারের চীনা সীমান্ত এলাকা ওয়াফেনী ও এংন নামক জায়গায় ইয়াবা তৈরির ১৫টি কারখানার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আরাকান আর্মি। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি সেখানকার বড় বড় ইয়াবা কারবারিদের কাছ থেকে প্রতি কাট ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। আরাকান আর্মির সদস্যরা ১০ হাজার পিস ইয়াবা ১২ থেকে ১৩ লাখ লাখ টাকায় বাংলাদেশি মাদক কারবারিদের কাছে সীমান্ত অতিক্রম করে জিরো পয়েন্টে পৌঁছে দিচ্ছে।

আরও জানা গেছে, বান্দরবানের ঘুমধুম, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদমসহ মিয়ানমারের সীমান্তের অন্তত ১০০টি পয়েন্টে স্থলপথ দিয়ে বড়-মাঝারি ইয়াবার চালান ঢুকছে। কক্সবাজারের টেকনাফ, ফিসারিঘাট, মুরুসকুল, মহেশখালী, আনোয়ারা, গহিরা, পতেঙ্গাসহ আরো কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে সবচেয়ে ইয়াবার বড় চালানগুলো যাচ্ছে জলপথে। ইয়াবার বড় চালানগুলো বরিশাল, চাঁদপুর ও খুলনার মোংলা সাগরপথ দিয়ে যাচ্ছে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে। মাদক বিক্রির এসব টাকা সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠিয়ে ডলার ও মিয়ানমারের মুদ্রায় পৌঁছে যাচ্ছে আরাকান আর্মির সদস্যদের হাতে। আরাকান আর্মি সেই টাকায় অস্ত্র মজুদ করছে।

হোয়াক্ষ্যং ইউপি সদস্য জালাল আহমেদ বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় অবাধে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু ইয়াবাই নয়, আরাকান আর্মিদের খাবারসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্য বাংলাদেশ থেকে তারা নিচ্ছে। জিরো পয়েন্টগুলোতে আরাকান আর্মির সদস্যরা অবাধে যাতায়াত করছে। ফলে এলাকাবাসী চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, আরাকান আর্মির সদস্যদের আয়ের কোনো পথ নেই। জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে তারা মাদক বিক্রি করে ভারী  অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করছে। বাংলাদেশ সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ না করলে মাদক কারবার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়তে পারে পার্বত্য অঞ্চল।

পার্বত্য অঞ্চলে আরাকান আর্মিদের নিয়মিত যাওয়া-আসা আছে মন্তব্য করে বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, আরাকান আর্মির অনেক সদস্য পার্বত্য অঞ্চল থেকে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। বাংলাদেশে তাদের অবৈধ প্রবেশ অনেকটা ওপেন সিক্রেট। রাখাইনের নিয়ন্ত্রণে এলে তারা যে কোন সময় পার্বত্য অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের জন্যও মরিয়া হয়ে উঠতে পারে। যদিও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি বলছে, সীমান্ত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় রয়েছে। নিয়মিত বিজিবির হাতে মাদক ও অনুপ্রবেশকারী আটক হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘সশস্ত্র আরাকান আর্মি এখন মাদকের ওপর নির্ভরশীল। তাদের অস্ত্রের অর্থ জোগানও ইয়াবা বিক্রির টাকায়। তারা এমনিই অস্ত্রের দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এখন আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী যদি কঠোর না হয় তাহলে ওই অঞ্চল আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগাররা যখন গৃহযুদ্ধে জড়ায়। তখন কিন্তু তারা মাদকের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে উঠেছিল। তাদের অস্ত্র কেনাকাটা এবং অর্থ উপার্জনের পথ ছিল মাদক বিক্রি। একইভাবে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের আরাকান আর্মিরাও একই পথে এগোচ্ছে। আমাদের সীমান্তে আরো সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।’ 

এ বিষয়ে বিজিবির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কর্নেল শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবির সদস্যরা সবসময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা মাদক নিয়মিত আটক করছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কাজ করছে বিজিবি।’

ইমতিয়াজ মাহমুদ ইমন/এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর