
ছবি : বাংলাদেশের খবর
আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চাঁদপুরে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬২ হাজার ৯৮টি গবাদি পশু। তবে জেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসাবে পশু চাহিদা রয়েছে ৭৬ হাজার ৩৫৪টি।
এ হিসাবে দাপ্তরিকভাবে পশুর ঘাটতি রয়েছে ১৪ হাজার ২৫৬টি। যদিও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর মনে করছে, আশপাশের জেলার পশু হাটগুলো সক্রিয় হলে এ ঘাটতি বাস্তবে প্রভাব ফেলবে না।
সম্প্রতি সদরসহ আশপাশের উপজেলার খামারি ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় তালিকাভুক্ত খামারি রয়েছেন ৩ হাজার ৭৭০ জন। খামারগুলোতে গরু উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ৪৯৭টি। ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য পশু উৎপাদন হয়েছে ১৯ হাজার ৬০১টি। সব মিলিয়ে উৎপাদন হয়েছে ৬২ হাজার ৯৮টি।
কোরবানির জন্য গবাদিপশু প্রয়োজন ৭৬ হাজার ৩৫৪টি। হিসেব মতে গবাদিপশুর সংকট রয়েছে ১৪ হাজার ২৫৬টি। চলতি বছর জেলায় ষাঁড় গরু উৎপাদন হয়েছে ২৪ হাজার ২৪৭টি, বলদ ৭ হাজার ৭৮১টি, গাভী ১০ হাজার ৪৬৯টি। সর্বমোট গরু উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ৪৯৭টি। মহিষ ২১৭টি, ছাগল ১৮ হাজার ৪৫৮টি, ভেড়া ৮৩০টি ও অন্যান্য পশু ৯৬টি।
সদর উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়নের খামারি কামাল ফরাজি বলেন, গত ৭ বছর আমাদের খামারে দুগ্ধ উৎপাদনের পাশাপাশি কোরবানির জন্য পশু পালন করা হয়। এ বছর আমাদের শতাধিক ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত। আশা করি দাম ভালো পেলে লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব। কারণ পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে।
একই এলাকার খামারি মো. মোশারফ বলেন, অন্য জেলা থেকে পশু আসলেও স্থানীয়ভাবে পালিত কোরবানির পশুর চাহিদা বেশি। আমাদের খামারে নিজেদের উৎপাদিত ঘাস ও দানাদার খাদ্যে ষাঁড়গুলো কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে আমাদের সমস্যা হচ্ছে শ্রমিকের দৈনিক হাজিরা ও খাদ্যের দাম বেশি। বিক্রিমূল্যের ওপর নির্ভর করবে আমাদের লাভ-লোকসান। দেড় লাখ থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের ষাঁড় আছে খামারে।
কল্যাণপুরের স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন গাজী বলেন, এলাকায় একাধিক খামারি রয়েছেন। তারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাবারে এ ষাঁড়গুলো প্রস্তুত করেছেন। তারা যদি ষাঁড়গুলোর ভালো দাম পান তাহলে টিকে থাকতে পারবেন। লোকসানে পড়লে খামারির সংখ্যা কমে যাবে এবং বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে।
ওই এলাকার ফারিজ এগ্রো ফার্মে শহর থেকে কোরবানির জন্য ষাঁড় দেখতে এসেছেন ক্রেতা গিয়াস উদ্দিন মিলন। তিনি বলেন, এ খামারের ষাঁড়গুলো দেখে পছন্দ হয়েছে। তবে দরদামে ঠিক থাকলে কেনা যাবে।
সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের খামারি মান্নান বলেন, খামারে এখন গরুর সংখ্যা কম। কারণ বিক্রিতে খরচ উঠে আসে না। এতে অনেকে আগ্রহ হারিয়েছেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার খামারি জসিম উদ্দীন মিন্টু বলেন, গবাদিপশুর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, খড়ের অপর্যাপ্ততা ও শ্রমিক সংকটের কারণে অনেকের ইচ্ছে থাকলেও গবাদিপশু পালনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। খামারি গড়ে তুলতে সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন।
একই উপজেলার সকদীরামপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিন, ছামাদ মিজি, আক্তার হোসেন পাশাপাশি বাসিন্দা। তারা পারিবারিকভাবে ৫ থেকে ৭টি করে কোরবানির ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন। এদের মধ্যে শাহাবুদ্দিন বলেন, তারা নিজেদের পরিশ্রমে এসব পশু লালন-পালন করেছেন। আশা করছেন তাদের ষাঁড় বিক্রিতে লাভবান হবেন।
চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, এ বছর আমরা কোরবানি প্রস্তুতের জন্য সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছি। যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। আর পশুগুলো প্রাকৃতিক খাবারে বেড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, জেলায় দুই শতাধিক কোরবানির পশুর হাট বসবে। চাহিদার আলোকে কোনো ধরনের পশুই সংকটে পড়বে না। কারণ কোরবানির হাটে অন্য জেলার পশু এলে চাহিদা মিটে যায়। সংকট কেবল কাগজে-কলমে।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, কোরবানির পশুর হাটগুলোতে আর্থিক লেনদেন ও ক্রেতাদের নিরাপত্তায় পুলিশবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও পুলিশের টহল সদস্যরাও কাজ করবে।
আলআমিন ভূঁইয়া/এমবি