পাইলট হওয়ার স্বপ্ন, রিকশা চালিয়ে ‘উড়োজাহাজ’ বানালেন সোহেল

রাহেবুল ইসলাম টিটুল, মাল্টিমিডিয়া করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১৬:৫৮

সোহেল রানা
‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’— এই কথারই যেন জীবন্ত উদাহরণ লালমনিরহাটের তরুণ সোহেল রানা। অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই করেও নিজের স্বপ্নকে থেমে যেতে দেননি তিনি। রিকশা চালিয়ে সংসার চালান, সেই আয়ে বানিয়ে ফেলেছেন একটি রিমোটচালিত ‘উড়োজাহাজ’!
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ভূখণ্ডের গুচ্ছগ্রাম বাজারের বাসিন্দা সোহেল। তার বাবা ইউনুস আলী ফেরি করে মালামাল বিক্রি করেন। মা শাহিনুর বেগম গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় সোহেল ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তার।
এরপর ঋণ নিয়ে কেনেন একটি অটোরিকশা। সেই রিকশা চালিয়ে চালান পরিবারের খরচ, পরিশোধ করেন ঋণ। তবে কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও ছোটবেলার স্বপ্নকে ভোলেননি তিনি— একদিন পাইলট হবেন, আকাশে ওড়াবেন বিমান। ইউটিউব দেখে গত পাঁচ বছর ধরে শিখেছেন ড্রোন ও উড়োজাহাজ বানানোর কৌশল। মানিকগঞ্জের জুলহাস নামের যুবকের তৈরি ‘বিমান’ দেখে অনুপ্রাণিত হন আরও।
সম্প্রতি সোহেল নিজের তৈরি দ্বিতীয় রিমোটচালিত ড্রোন সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করিয়েছেন। দৈর্ঘ্য ২১ ইঞ্চি, প্রস্থ ২৮ ইঞ্চি, ওজন মাত্র ৩৮০ গ্রাম। এটি লিপো ব্যাটারিতে চলে এবং এক কিলোমিটার ওপরে উঠে প্রায় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে।
স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন আশপাশের গ্রাম থেকে বহু মানুষ সোহেলের তৈরি ‘প্লেন’ দেখতে আসেন। কেউ কেউ অবাক বিস্ময়ে বলেন, ছেলেটা বড় কিছু করবে, সুযোগ পেলে দেশকেও গর্বিত করবে।
বাংলাদেশের খবরকে সোহেল বলেন, ‘বিমানের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু অভাব সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি কেউ পাশে দাঁড়ায়, আমি আরও ভালো কিছু করে দেশের জন্য কিছু করতে পারব।’
তার মা শাহিনুর বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেটা ছোট থেকেই খেলনা বিমান তৈরি করত। অভাবের কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ছেলের আগ্রহ ও চেষ্টা দেখে আমরা গর্বিত।’
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ছেলেটি বেশ প্রতিভাবান। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।’