Logo

সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে আবহাওয়ার রূপ

গাছ কেটে শহর, বজ্রপাতে বাড়ছে মৃত্যু

Icon

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১৯:২৪

গাছ কেটে শহর, বজ্রপাতে বাড়ছে মৃত্যু

ছবি : বাংলাদেশের খবর

নারায়ণগঞ্জে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে জেলার চারটি উপজেলা ও দুটি থানায় অন্তত ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তালগাছসহ উঁচু জাতের গাছপালা না থাকায় বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। অথচ তালগাছ রোপণে গৃহীত প্রকল্পগুলোও রয়েছে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার দুষ্টচক্রে।

গত বুধবার (১৪ মে) নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় বজ্রাঘাতে মারা গেছে নিরব (১৪) নামের এক স্কুলছাত্র। সে কামড়াব এলাকার সৌদি প্রবাসী আফজাল মিয়ার ছেলে এবং পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্কুল থেকে ফিরে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় আবারও সামনে এসেছে তালগাছ বিলুপ্তির বিষয়টি। নব্বই দশকের পর থেকে নারায়ণগঞ্জে গাছপালা কেটে ফেলা, ড্রেজার কালচার, খাল-বিল ভরাট এবং বৃক্ষহীন নগরায়ণের ফলে বদলে গেছে জেলার পরিবেশ-প্রতিবেশ। এক সময় শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় তালগাছ দেখা গেলেও এখন তা পুরোপুরি বিলুপ্ত প্রায়।

এদিকে, আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দেশের ১৪টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে বজ্রসহ ঝড় বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জও রয়েছে। এপ্রিল মাসে বজ্রপাতে ৩০ জন এবং চলতি মে মাসে এরই মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালে বজ্রপাতে মারা যান ২৯৭ জন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের পরিচালক মুহাম্মদ শাহ আলম জানান, প্রতি বর্ষায় তাল বীজ রোপণের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও বরাদ্দের অভাবে কার্যকর কিছু হচ্ছে না। উপজেলা পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও গরু-ছাগলের কারণে অনেক চারা বিনষ্ট হয়।

২০১৯-২০ অর্থবছরে নারায়ণগঞ্জের চার উপজেলায় প্রায় ৭ লাখ তালের আঁটি বপন ও ৪ হাজার চারা রোপণের দাবি করা হলেও বাস্তবে এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। রূপগঞ্জে ৩ লাখ ৬৬০টি তালবীজ বপনের তথ্যে গণমাধ্যমকর্মী বিরল আহমেদ বলেন, “এগুলোর কোনো গাছ দেখা যায়নি। রাস্তাগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।” স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও গাছ মরার কথা স্বীকার করছেন।

রূপগঞ্জের ভেলাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন টিটো বলেন, ‘তালগাছ লাগিয়েছিলাম, কিছু আছে। তবে অধিকাংশই মারা গেছে। গরু-ছাগলে খেয়ে ফেলেছে।’

আর আড়াইহাজার উপজেলার ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার চোখে কোনো রাস্তায় তাল চারা পড়েনি। তারপরও খোঁজ নিচ্ছি।’

ভূগোলবিদ ও মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যাপক ইসহাক মিয়া বলেন, ‘বজ্রপাত প্রতিরোধে শুধু আধুনিক প্রযুক্তি নয়, প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনায়ও গুরুত্ব দিতে হবে। তালগাছসহ উঁচু গাছপালা রোপণ এবং সংরক্ষণ করতে হবে। বৃক্ষহীন নগরায়ণ বজ্রপাতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, ‘বর্তমানে আমরা দুই থেকে চার ঘণ্টা আগেই বজ্রপাতের সতর্কতা দিতে পারি। ইউমোরি স্যাটেলাইটের তথ্য ও উন্নত মডেল বিশ্লেষণ করে এই সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ২০১৬ সাল থেকে বজ্রপাতকে বাংলাদেশে ‘দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

পরিবেশবিদদের মতে, বজ্রপাতের ভয়াবহতা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হলে সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম রোধ, তদারকি বৃদ্ধি এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে তালগাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর