‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে শিল্পাঞ্চল দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন লীগের নেতাকর্মীরা

আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ২০:৩৭
-682b4245deacf.jpg)
ঢাকার উপকণ্ঠ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় সম্প্রতি একটি চক্র ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এ চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ ঘোষিত আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, আশুলিয়া থানা শ্রমিক লীগের প্রচার সম্পাদক নাজমুল হক ইমু, তার সহযোগী সাব্বির আহমেদ ওরফে সাইকো সাব্বির এবং আওয়ামী লীগ নেতা সুমন আহমেদ ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ ক্যাডার তিস্তা বাবু ও ভ্যালকা সোহেল—এই চারজন মিলে ওই কথিত সাংবাদিক চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সম্প্রতি শিমুলিয়া এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জড়িত ৯ জন ছাত্রনেতার ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। অভিযোগ, এই হামলা ধামাচাপা দিতে উল্টো ওই ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সামাজিক মাধ্যমে ও ভূঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে ‘সংবাদ’ প্রকাশ করছে কথিত এই সাংবাদিকেরা।
ভুক্তভোগীদের দাবি, থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশের ভূমিকা নীরব। এমনকি, পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাও অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এসআই বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা লেখা ছড়িয়ে দিয়েছে তারা। আমার জায়গায় আমার সহকর্মীর ছবি ব্যবহার করেছে।’
স্থানীয় সাংবাদিক সোহাগ হাওলাদার জানান, ‘এই চক্র কখনো আমাকে দালাল বানাচ্ছে, কখনো আওয়ামী দোসর। আমি থানায় একাধিকবার অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সংগঠক রিফাত আহমেদ ইমন বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আমাদের ভূমিকা সবার জানা। আজ যারা ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে আমাদের নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা আসলে নিষিদ্ধ দলের পুনর্বাসন চায়।’
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ ভূঁইয়ার নামেও অন্তত অর্ধশতাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরাসরি গুলি করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ আছে, তার ক্যাডার নাজমুল হক ইমু আশুলিয়া থানায় অন্তত তিনটি হত্যা মামলার আসামি, পাশাপাশি পাঁচটিরও বেশি জিডি রয়েছে তার নামে। তবে তার বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে আশুলিয়া থানা শ্রমিক লীগের প্রচার সম্পাদক ও জাতীয় শ্রমিকলীগ আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সদস্য নাজমুল হক ইমুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কলটি রিসিভ করেননি।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবীর বলেন, ‘যারা হলুদ সাংবাদিকতার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘লেগুনা আপেল’ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ, প্রকৃত সাংবাদিক ও ছাত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা পতিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজে নিয়োজিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সতর্ক আছি।’
এমএইচএস