Logo

সারাদেশ

ফেনী

আলোচিত একরাম হত্যার ১১ বছর, ডেথ রেফারেন্সে আটকে আছে রায়

Icon

ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ২১:৫১

আলোচিত একরাম হত্যার ১১ বছর, ডেথ রেফারেন্সে আটকে আছে রায়

ফেনীর আলোচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পূর্ণ হবে মঙ্গলবার (২০ মে)। ২০১৪ সালের এই দিনে তৎকালীন ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক একরামকে ফেনীর বিলাসী সিনেমা হলের সামনে পুড়িয়ে ও গুলি করে হত্যা করে নিজ দলীয় নেতাকর্মীরা।

২০১৮ সালের ১৩ মার্চ চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায়ে ৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন আদালত। পরে দণ্ডপ্রাপ্তদের কয়েকজন এ মামলায় অপিল করলেও তা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ডেথ রেফারেন্সের শুনানি আটকে আছে। এতে করে রায় কার্যকর করা যাচ্ছে না।

আসামিপক্ষের দাবি, এ ঘটনায় নিরীহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজনকে ফাঁসানো হয়েছে। আর বাদী পক্ষের দাবি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা কার্যকরে সময়ক্ষেপণ ও পলাতকদের গ্রেপ্তারে শৈথিল্য অবিচারের শামিল। তাই দ্রুত মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের দাবি করেছেন একরামুল হকের স্বজন ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা।

ফেনী জেলা আদালত, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের জিএ একাডেমি এলাকার বিলাসী সিনেমা হলের সামনে প্রকাশ্যে একরামুলের গাড়ি গতিরোধ করে। পরে তাকে কুপিয়ে, গুলি করে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

ঘটনার দিন রাতেই তার ভাই রেজাউল হক বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ এ মামলায় তদন্ত শেষে একই বছরের ৩০ আগস্ট ৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আলোচিত এ মামলায় গ্রেপ্তার ১৬ আসামি আদালতে ঘটনায় জড়িত ছিলেন মর্মে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৫৬ আসামির মধ্যে ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ ও ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সোহেল নামের এক আসামি রায় ঘোষণার আগেই র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।

বর্তমানে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ আসামির মধ্যে ২২ জন কারাগারে রয়েছেন। বাকি ১৭ জনের মধ্যে ৮ আসামি জামিনে গিয়ে পলাতক ও ৯ আসামি ঘটনার শুরু থেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে।

কারাগারে যে ২২ আসামি রয়েছেন তারা সবাই খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। এরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী সিফাত, আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে জামিনে গিয়ে পলাতক ৮ আসামি হচ্ছেন- ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদুল ইসলাম, এমরান হোসেন রাসেল, জাহিদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিজ উদ্দিন অনিক, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, আরমান হোসেন কাউসার ও জসিম উদ্দিন।

এছাড়াও এ মামলায় এখনো ৯ আসামিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করতে পারেননি। তারা শুরু থেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরা হলেন- ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মোহাম্মদ এরফান আজাদ, শফিকুর রহমান, একরাম হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, মহিউদ্দিন আনিছ, টিটু ও বাবলু।

মামলার রায়ে খালাস পাওয়া ১৬ জন হলেন- বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, মো. আলমগীর ওরফে আলা উদ্দিন, আবদুর রহমান রউফ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মো. শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মো. ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মো. মাসুদ, কাদের ও ফারুক।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, ‘একরাম হত্যা মামলার ১৭ আসামিকে গ্রেপ্তারে সোর্স নিয়োগসহ যাবতীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

আসামি পক্ষের আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল বলেন, ‘নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার পর নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন কারাগারে থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২২ আসামি। দীর্ঘদিন আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সের শুনানিও করা যাচ্ছে না। আইন অনুযায়ী উচ্চ আদালতে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি সম্পন্ন হওয়ার পরই রায় কার্যকর করা হবে।’

এদিকে নিহত একরামুল হক একরামের স্বজন ও দলীয় সহকর্মীরা জানান, দেশের আলোচিত  জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা একরাম হত্যা মামলার রায় কার্যকরে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। 

নিহত একরামের ভাই মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা নিম্ন আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। আমরা চাই সরকার দ্রুত এ রায় কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এবং উচ্চ আদালতেও নিম্ন আদালতের রায়ের প্রতিফলন ঘটবে। এ রায় কার্যকরে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।’

ফেনী জেলা আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান সেলিম বলেন, ‘মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, জব্দ তালিকা, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও নিম্ন আদালতের রায় পর্যায়ক্রমে পেপারবুকে সাজানো থাকে। পেপারবুক প্রস্তুত না হওয়ায় আসামিদের আপিলের শুনানি শুরু হয়নি। কখন শুনানি শুরু হবে তাও বলা যাচ্ছে না।

এমএইচএস/ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর