মাত্র ৩৫০ টাকা পুঁজি নিয়ে আতর বিক্রি করে পাঁচ সন্তানসহ সাত সদস্যের সংসার চালাচ্ছেন নওমুসলিম আব্দুল্লাহ হিল মাহাদী। তার দোকানের নাম ‘আব্দুল্লাহ আতর হাউস’। মুসলিম পরিবারের সঙ্গে বেড়ে ওঠা আব্দুল্লাহ ছোটবেলা থেকেই ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। ২০০১ সালে কোর্টের মাধ্যমে তিনি সেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

নীলফামারী পৌর শহরের বাড়াইপাড়া মহল্লার আব্দুল্লাহর পূর্ব নাম পরিতোষ চন্দ্র রায়। হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া আব্দুল্লাহ পিতা শ্রী ধৌলু চন্দ্র রায় এবং মাতা নিলাবতী রাণীর তৃতীয় সন্তান। ছোটবেলা থেকেই মুসলিম পরিবার ও সমাজের সঙ্গে তার চলাফেরা ছিল। এতে পরিবারে ধর্মীয় বিরোধ শুরু হয়। এরপর ছেলে-মেয়েসহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কারণে বাবা-মায়ের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

শুরু হয় সংগ্রামী পথচলা। অভাব-অনটন, দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়েও ভিক্ষা না করে নিজেই পুঁজি সংগ্রহ করে আতর ব্যবসা শুরু করেন আব্দুল্লাহ। তার দোকানে আতর ছাড়াও টুপি, তসবি, সুরমা, মিসওয়াক, জায়নামাজ, খাঁটি মধু ও কালোজিরার তেল বিক্রি হয়।

আব্দুল্লাহ বলেন, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা এবং সংসারের দায়িত্ব আতর ও টুপির ব্যবসা থেকেই চালাচ্ছি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত আমার দৈনন্দিন ইবাদত।

জেলা শহরের বড় বাজারের মসজিদ সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস রোডে ভাড়া নেওয়া একটি ছোট দোকানে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। যদিও মালপত্র কম তবু হালাল পথে সংসার চালানোই তার একমাত্র লক্ষ্য।

ওই মসজিদের ঈমাম মাওলানা মুক্তি হাবিবুল্লাহ রহমানী জানান, আমার মসজিদের পাশেই আব্দুল্লাহর দোকান। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করেন। নওমুসলিম হিসেবে অন্যভাবে আয় করতে পারতেন, কিন্ত তা না করে হালাল ব্যবসা করে সৎপথে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ। প্রত্যেকের উচিৎ তার পাশে দাঁড়ানো।

জেলা শহরের নিউবাবু পাড়ার বাসিন্দা মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, আব্দুল্লাহ নওমুসলিম হিসেবে মানুষের কাছে হাত পেতে সংসার চালাতে পারতো, কিন্ত ওই রাস্তায় না গিয়ে আতরের ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছে। তার দোকানে ঈদ ছাড়াও সব সময় টুপি, বিভিন্ন ধরণের আতর, সুরমা, তসবি, মেসওয়াক, জায়নামাজ, খাঁটি মধু ও কালোজিরার তেল পাওয়া যায়। একজন নওমুসলিম হিসেবে প্রত্যেকের উচিৎ তার প্রতি সদয় হওয়া, তাকে সাহায্য করা।

নীলফামারী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুর আলম বলেন, আবদুল্লাহ আতর বিক্রি করে সাত সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চালান। এটা খুবই ভাল দিক। স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারি-বেসরকারিভাবে তার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

• তৈয়ব আলী সরকার/এটিআর