এবার বোরো চাষ ও উৎপাদনে রেকর্ড, কৃষকের মুখে হাসি

নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১৭:০৪

এবার বোরো চাষ ও উৎপাদনে রেকর্ড, কৃষকের মুখে হাসি। ছবি : বাংলাদেশের খবর
নীলফামারীতে মাঠের পর মাঠ সোনালি ধানে ভরে উঠেছে। মৌসুমের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরোর ফলন বাম্পার হয়েছে। তার ওপর বাজারে ভালো দাম মিলছে। সব মিলিয়ে খুশির হাওয়া বইছে কৃষক পরিবারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ছয়টি উপজেলায় ৮১ হাজার ৮৫৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১ হাজার ৮৫৭ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৮ মেট্রিক টন। গত বছর চাষ হয়েছিল ৮১ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন। ফলে চাষ ও উৎপাদন—উভয় ক্ষেত্রেই এবার রেকর্ড হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় জানায়, চলতি অর্থবছরে সরকার প্রতি কেজি ধানের দাম নির্ধারণ করেছে ৩৬ টাকা। অপরদিকে, গত বোরো মৌসুমে সরকার প্রতি কেজি ধানের দাম নির্ধারণ করেছিল ৩০ টাকা। সে হিসাবে গতবারের চেয়ে প্রতি কেজিতে ধানের দাম বেড়েছে ৬ টাকা। এতে প্রতি মণ ধানের মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৪০ টাকা।
সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের কৃষক গিরিশ চন্দ্র রায় জানান, চলতি মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধান লাগিয়েছি। বীজতলা, হালচাষ, রোপণ, সার, কীটনাশক, সেচ, নিড়ানি, কৃষিশ্রমিক ও ধান মাড়াই মেশিন ভাড়া বাবদ বিঘায় খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ৩৫০ টাকা। তিন বিঘা (৯০ শতাংশ) জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছি ৪৫ মণ। প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ৪৪০ টাকা ধরলে বিক্রি মূল্য দাঁড়ায় ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা। এতে খরচ বাদে লাভ হবে ৩৪ হাজার ৪৫০ টাকা।
একই ইউনিয়নের উত্তর রামনগর গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন বলেন, সরকার গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি কেজিতে ধানের দাম ৬ টাকা বাড়িয়েছে। আড়াই বিঘা (৭৫ শতাংশ) জমিতে ধানের ফলনও হয়েছে বাম্পার। বাজারদর বাড়ায় স্থানীয় কৃষকরা খুবই খুশি। তবে সরকার যেন কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করে, সে বিষয়টি নজরে রাখা জরুরি।
সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের উত্তরাশশী গ্রামের বোরো চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ব্রি-৫৮ জাতের ধান দেড় বিঘা এবং ব্রি-২৮ আগাম জাতের দেড় বিঘা—মোট তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ২৮ জাতের দেড় বিঘা জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছি। এতে পেয়েছি ২৭ মণ ধান। গ্রামের পাইকারদের কাছে প্রতি মণ ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছি ৪৩ হাজার ২০০ টাকা। এতে খরচ বাদে লাভ হয়েছে ২৭ হাজার ২০০ টাকা।
তিনি বলেন, বোরোর বাম্পার ফলন ও ভালো সরকারি রেট পেয়ে খুশি জেলার কৃষকরা।
জেলার জলঢাকার খুটামারা ইউনিয়নের হরিশ্চন্দ্রপাঠ গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, দিনাজপুর সেচ ক্যানেলের পানি দিয়ে ব্রি-২৮ জাতের ধান ভাত খাওয়ার জন্য দুই বিঘা জমিতে লাগিয়েছি। ফলনও হয়েছে বাম্পার। কিছু সংসারিক ঝামেলার কারণে কাঁচা ধান বিক্রি করতে হয়েছে। তবে বাজারে ব্রি-২৮ ধানের দাম মোটামুটি ভালো। কৃষকরা বোরো চাষে লাভবান হবেন।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক আহমেদ বলেন, সদরে ২৩ হাজার ৭৪৬ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে হয়েছিল ২৩ হাজার ৭০২ হেক্টর। অর্থাৎ, এবার ৪৪ হেক্টর জমি বেশি চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এসএম আবুবকর সাইফুল ইসলাম বলেন, গতবারের তুলনায় এবার ১৪৯ হেক্টর জমি বেশি চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ শতাংশ ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে ও বাজারে ভালো দাম থাকলে কৃষকরা ধান বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন।
তৈয়ব আলী সরকার/এমবি