
টাঙ্গাইল ভূঞাপুরের গোবিন্দাসীর এক সময়ের সেরা গরুর হাটটি এখন ক্রেতাশূন্য প্রায়। বিগত কয়েক বছরে হাটে নানা অনিয়ম, অবৈধ টোল আদায়, পাইকারদের নিরাপত্তা, অতিরিক্ত খাজনা, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে এখন ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে হাটটি। সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে হাটজুড়ে।
একসময় সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, কুমিল্লা, বরিশালসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসতো গরু কিনতে। নানা কারণে এখন ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় হাটটি এখন ক্রেতা সংকটে পড়েছে। হাটের সঙ্গে জড়িত প্রায় কয়েক হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয়েছে বেকারত্ব। আগামী এক সপ্তাহ পরেই কোরবানি ঈদ। ঈদ ঘনিয়ে আসলেও ক্রেতা সংকটে খামারি ও গরুর পাইকাররা হতাশা ভুগছেন।
পাইকাররা জানান, হাটে পর্যাপ্ত গরু উঠলেও ক্রেতার আগমন কম, বেচাকিনি নেই বললেই চলে। গরুর দামও অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। রোববার ও বৃহস্পতিবার সপ্তাহে দুদিন গোবিন্দাসীতে হাট হয়। তারা জানান, বিগত বছরগুলোতে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা দামের বিশাল আকারের গরু আমদানি ও বিক্রি হতো। কিন্তু হাটের বেহাল দশায় এখন আর এসব গরু দেখা যায় না ।
গরু বিক্রেতা হাবিব বেপারি বলেন, ঈদের আগে আর মাত্র তিনটি হাট পাওয়া যাবে। ঈদ সন্নিকটে হলেও বিক্রি একেবারেই কম। আমি এ হাটে ৭০টি দেশি বিদেশী গরু উঠিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১টি গরুও বিক্রি হয়নি। কয়েক বছর ধরে ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।
হাবিব বলেন, যমুনা সেতু হওয়ায় আমাদের এই হাটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দূর জেলার ক্রেতারা বর্ডার থেকে সরাসরি গরু নিয়ে চলে যায়।
নোয়াখালী থেকে গরু কিনতে আসা আমির হোসেন ও স্বপন ভূইঞা বলেন, আমরা ১৮-২০ বছর ধরে এই হাটে গরু কিনতে আসি, কোনদিন কোনো সমস্যা হয়নি। হাটটি একসময় খুবই জমজমাট ছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে হাটটির অবস্থা খুবই খারাপ।
হাট পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা মো. মাকসুদ জামিল মিন্টু বলেন, বিগত সরকারের আমলে নানা অনিয়ম করে ধ্বংস করে ফেলেছে ঐতিহ্যবাহী এ হাটটি। তবে আমরা চেষ্টা করছি হাটটির ঐতিহ্য আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, এ বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলায় ২২ হাজার ৩৪৪ টি গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। চাহিদা রয়েছে ১৩ হাজার ৮৯০ টি পশু। উদ্বৃত্ত রয়েছে ৮ হাজার ৪৫৪ পশু। খামারি রয়েছে ৫২৮ জন। আশা করছি খামারিরা লাভবান হবেন। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে গোবিন্দাসীসহ নিকরাইল, শিয়ালকোল এবং গোবিন্দপুর হাটে পশু পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু আব্দুল্লাহ খান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল অব্যাহত রাখবে।
- এএ