Logo

সারাদেশ

মাদক নিয়ন্ত্রণ অফিস থেকেই মাদক-অস্ত্র উদ্ধার

Icon

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ১৯:৩৮

মাদক নিয়ন্ত্রণ অফিস থেকেই মাদক-অস্ত্র উদ্ধার

ঠাকুরগাঁওয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অফিসে মিলল বিপুল পরিমাণ মাদক-অস্ত্র। ছবি : বাংলাদেশের খবর

ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের দুটি কক্ষে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য, দেশীয় অস্ত্র ও নগদ অর্থ উদ্ধার করেছে জেলা প্রশাসনের একটি দল।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুরে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ তালুকদারের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের সময় অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ অফিস থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। 

অভিযানের শুরুতেই সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার পর তিনি দ্রুত কার্যালয় ত্যাগের চেষ্টা করেন।

জানা যায়, ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ অফিস থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি বারবার এড়িয়ে যান। কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

পরক্ষণেই তাদের ‘টর্চার সেল’ হিসেবে পরিচিত একটি কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায় বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদ, চোলাই মদ ও বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। এছাড়া সেখানে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রও মজুত ছিল।

তাৎক্ষণিকভাবে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনাস্থলে পাঠান। ম্যাজিস্ট্রেট আসার পর তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র জব্দ করেন। সরকারি অফিসে এমন মালামাল রাখার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম তিনি দেখাতে পারেননি।

মাদকদ্রব্য অফিসের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, জব্দকৃত কিছু মাদক মামলার এজাহারভুক্ত। তবে তিনি সেগুলোরও কোনো নির্দিষ্ট কাগজ দেখাতে পারেননি।

জব্দকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- চোলাই মদ ৪০.৫ লিটার, বিদেশি মদ ৩ লিটার, দেশীয় অস্ত্র ১৪টি, বিদেশি মদের খালি বোতল ২৬টি, ফেনসিডিলের খালি বোতল ১৫৫টি, ফেনসিডিল ৮ বোতল, টাপেন্ডাভল ট্যাবলেট ১২টি পাতা, হেরোইনের পুড়িয়া ১৮টি, ইয়াবা ট্যাবলেট ৮৫ প্যাকেট, প্যাথেডিন ৮ ডোজ অ্যাম্পুল, ব্রুপেনের ফাইন ইনজেকশন ৯৩টি, গাঁজা ২৫০ গ্রাম + ৬৪টি পুড়িয়া, আলোয়া পাতা ২৫০ গ্রাম, কালো রঙের তরল ৫০০ মিলি, সিরিঞ্জ ৫টি, মোবাইল ১০টি, নগদ অর্থ ১ হাজার টাকার নোট ১টি, ৫০০ টাকার নোট ২টি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ঠাকুরগাঁও অফিস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। তারা মানুষকে ফাঁসিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিত, সেটাই আজকে প্রকাশ পেয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন মিডিয়ায় তার (ফরহাদ আকন্দ) নামে কয়েকবার সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।’

এ অভিযান ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভেতরের চিত্র উন্মোচন করেছে। সাধারণ মানুষ এখন প্রশ্ন তুলছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা একটি সরকারি অফিসে কীভাবে এতো বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র মজুত থাকে? জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত এ ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং অধিদপ্তরের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আবু সালেহ/এমবি 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর