Logo

সারাদেশ

সাগরের ঢেউয়ে ভেসে গেল ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার রাস্তা

Icon

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ১১:০৭

সাগরের ঢেউয়ে ভেসে গেল ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার রাস্তা

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সাগরের ঢেউয়ে ভেসে গেল ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ১৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি সড়ক। কুয়াকাটা হোটেল সিভিউ থেকে ঝাউবন পর্যন্ত এই সড়কটির কাজ এখনো শেষ হয়নি, এর আগেই জোয়ারের পানিতে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রাস্তা ধসে পড়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই এমন ধ্বংস নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে সমালোচনার ঝড়।

সাম্প্রতিক লঘুচাপের কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ও প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে মেরিন ড্রাইভ সড়কসহ সংলগ্ন সবুজবেষ্টনী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত এই এলাকায় গাইডওয়াল ছাড়া সড়ক নির্মাণ করা হয়, যা প্রকল্পের পরিকল্পনাহীনতা ও দায়িত্বহীনতা স্পষ্ট করে তুলেছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় তৎকালীন পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ তিনটি প্রতিষ্ঠান— মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স, মেসার্স আবরার ট্রেডার্স ও এসএম ট্রেডার্স। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রভাবিত করা হয়েছে এবং নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।

পৌরসভার তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেছে, অথচ কাজের অগ্রগতি অত্যন্ত কম। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ইট ও বালুর মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম বলেন, এত টাকা খরচ করে রাস্তা বানানো হয়েছে, অথচ উদ্বোধনের আগেই ধসে গেছে! এটা লজ্জার। অন্য আরেকজন বলেন, সঠিক পরিকল্পনা থাকলে এভাবে টাকা পানিতে ভেসে যেত না।

কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গাইডওয়াল ছাড়া রাস্তা নির্মাণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোটি টাকার প্রকল্প এভাবে ধ্বংস হওয়া চরম অব্যবস্থাপনার উদাহরণ।

এসএম ট্রেডার্সের মালিক সাদ্দাম মাল বলেন, আমি সরাসরি কাজ করিনি, সাব-কন্ট্রাকে দিয়েছিলাম। তবে তিনি সেই সাব-কন্ট্রাক্টর রুহুল আমিনের ফোন নম্বর দিতে পারেননি। অন্য দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পৌরসভার প্রকৌশলী সুজন বলেন, কাজ এখনও চলমান। অনিয়ম প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাবেক পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কাজ দেওয়া হয়েছে। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ সত্য নয়।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম বলেন, প্রকল্প নিয়ে আমরা ক্ষুব্ধ। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি প্রস্তুত করা হয়েছে। বকেয়া বিল বন্ধ, জামানত বাজেয়াপ্ত এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

  • জাকারিয়া জাহিদ/এটিআর
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর