
ছবি : বাংলাদেশের খবর
দিনভর টানা বর্ষণে বন্যার শঙ্কায় ভীতিকর পরিস্থিতিতে দিনযাপনে কুমিল্লাবাসী। বৃষ্টির পানিতে কুমিল্লা নগরীর অধিকাংশ সড়ক ডুবে গেছে। গোমতী নদীর পানি বেড়ে চলছে। বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যুৎ নেই, খুঁটি ভেঙ্গে পড়ছে। এতে জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, শুক্রবার (৩০ মে) সকাল ১১ টায় কুমিল্লায় ৪১ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল থেকে থেমে থেমে চলতে থাকা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা, পরিবহন সংকট ও চরম জনদুর্ভোগ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের দিনমজুর শ্রেণিপেশার লোকেরা।
জানা যায়, বৃষ্টি শুরু হয় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালেই স্কুল ও অফিসে যাওয়ার সময় দেখা দেয় তীব্র জলাবদ্ধতা ও যানজট। নগরীর কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, ঠাকুরপাড়া, ধর্মপুর, চকবাজার, শাসনগাছা ও বাদুরতলা এলাকায় রাস্তায় জমে থাকা পানি রীতিমতো ছোট খালে রূপ নিয়েছে।
শুক্রবার (৩০ মে) বেলা ১১টায় অনেক দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে পানি উঠে গেছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। অনেক চালক এই সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। কান্দিরপাড় থেকে আলেখারচর পর্যন্ত যেখানে সাধারণত ভাড়া ২০-৩০ টাকা, সেখানে আজ গুনতে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। নগরীর অন্যান্য সড়কেও একই অবস্থা।
অশোকতোলা এলাকার শাহাদাত হোসেন সৈকত বলেন, কান্দিরপাড় থেকে আলেখারচর বিশ্বরোড পর্যন্ত যেতে চাইলে সিএনজিচালক ৫০ টাকা ভাড়া চায়। না দিলে যাবে না। বাধ্য হয়েই গেছি। বৃষ্টি এলেই ভাড়া বেশি হয়ে যায়।
রিকশাচালক হেলাল মিয়া বলেন, ‘সারাদিন বৃষ্টি। এই অবস্থায় রিকশা চালানো কঠিন। রাস্তায় জ্যামও আছে। নিজেরাও ভিজে যাচ্ছি। তাই একটু বাড়তি ভাড়া নিই। আমরাও তো কষ্টে আছি।’
একইভাবে, সিএনজি চালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘বৃষ্টিতে গাড়ি চালাতে সমস্যা হয়, বিশেষ করে পানিভর্তি রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই একটু বাড়তি ভাড়া চাইতেই হয়।’
বৃষ্টির কারণে নগরীর দোকানপাটেও দেখা গেছে ক্রেতাশূন্যতা। রাজগঞ্জ বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে তেমন বিক্রি হয়নি। দোকানের সামনের রাস্তায় পানি জমেছে, মানুষ আসছে না।
নগরবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর একই সমস্যা দেখা দিলেও সিটি করপোরেশন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয় না। ভাঙাচোরা ড্রেন, অপরিকল্পিত নগর উন্নয়ন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। যারা নগর ভবনের এই দায়িত্বে থাকেন বা আসতে চান তাদের মুখে বুলি আওড়ানো থাকে নগরীর জলাবদ্ধতার নিরসন কাজটা সর্বপ্রথম গুরুত্ব দিয়ে করবেন কিন্তু পরবর্তীতে আর টালবাহানায় সে কাজ একই ধারাবাহিকতায় চলতে থাকে।
বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা নূর হোসেন বলেন, নগরীতে এত উন্নয়নের কথা শুনি, অথচ একটু বৃষ্টি হলেই এলাকা নদীতে পরিণত হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে পানি নামতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায়।
বরুড়া উপজেলার বাসিন্দা সুজন মজুমদার বলেন, সকাল থেকে বরুড়ার বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ এর খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। তাই বিদ্যুৎ সকাল থেকেই নেই।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম ভূঁইয়া বলেন, ‘নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। পুরোনো এলাকার অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে হঠাৎ এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের কাজ করছি। ইতিমধ্যে পাঁচটি প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।’
কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. সৈয়দ আরিফুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আজ সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে ৩৯ দশমিক ৫ মিলিমিটারে দাঁড়িয়েছে। এই বৃষ্টি টানা তিন দিন থাকতে পারে।’
সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ/এমআই