ঝিনাইদহ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আহত বাংলাদেশির মৃত্যু

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ১৬:১৯

ছবি : সংগৃহীত
ঝিনাইদহের মহেশপুরে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আহত এক বাংলাদেশি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। গুলিবিদ্ধের ১৩ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (৩০ মে) ভোরে মারা যান তিনি।
নিহত ব্যক্তি, মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় পশ্চিমপাড়ার লুৎফর রহমান ওরফে লতাফুলের ছেলে নাসির উদ্দীন (৪২)।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, গত ১৭ মে রাতে মহেশপুর সীমান্তের শ্যামকুড় এলাকার ‘চেয়ারম্যান ঘাট’ সংলগ্ন সীমান্তে ভারতীয় পাখিউড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা নাসির উদ্দীনকে গুলি করে। পেট ও বুকে ছররা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি গোপনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। দীর্ঘ ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে শুক্রবার (৩০ মে) ভোরে তিনি মারা যান।
সীমান্ত এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, ১৭ মে রাত ৮টার দিকে মহেশপুর উপজেলার লড়াইঘাট বিওপি সংলগ্ন (বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করানোর সময়) সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা করে নাসির উদ্দীন ছাড়াও একই উপজেলার পদ্মপুকুর গ্রামের বর্ডার রিপন ও অনন্তপুর গ্রামের সোহাগ। ওই সময় ভারতের পাখিউড়া বিএসএফ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যদের সঙ্গে তাদের মারামারির ঘটনা ঘটে। তখন বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে প্লাস্টিক বল অ্যামিনেশন (ছররা গুলি) ছোঁড়ে।
এতে নাসির বুক, পেট ও পায়ে গুলি লেগে গুরুতর আহত হন। ওই সময় সোহাগ ও রিপন সামান্য আহত হন। পরে সীমান্ত থেকে আহতের স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। আহতরা বিষয়টি গোপন রেখে সোহাগ ও রিপনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং নাসিরকে প্রথমে চুয়াডাঙ্গার একটি হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরবর্তীতে নাসিরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে নাসির মারা যান।
নিহতের চাচা ও শ্যামকুড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহানুর বলেন, নাসির মারা গেছেন এটা সত্য। তবে কীভাবে মারা গেছেন তা জানি না। তিনি জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পর দাফন সম্পন্ন হবে।
মহেশপুর থানার গ্রাম পুলিশ ফেরদৌস খান জানান, পরিবার বিএসএফের গুলিতে মৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করছে না। তবে স্থানীয়দের অনেকে জানান, সীমান্তে গুলিতে আহত হয়েই তার মৃত্যু হয়েছে।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে জেনেছি। খোঁজ নিচ্ছি।’
এ বিষয়ে মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, সীমান্তে বিএসএফের ছররা গুলিতে আহত নাসিরের মৃত্যু হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিস্তারিত জানাতে পারব।
৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল আলম জানান, গত ১৭ তারিখে সীমান্তে একটি ঘটনা ঘটেছিল। খবর পাওয়ার পর বিজিবি ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তবে নিহতের পরিবার বিএসএফ গুলির বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ করেনি।
উল্লেখ্য, এর আগে ১১ এপ্রিল বাঘাডাঙ্গা গ্রামের রমজান আলীর ছেলে ওয়াসিম এবং ২৭ এপ্রিল গোপালপুর গ্রামের হানিফ আলীর ছেলে ওবাইদুর রহমান বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। দেড় মাস পার হলেও ওই দুই বাংলাদেশির মরদেহ এখনও ফেরত দেয়নি বিএসএফ। বিজিবি সূত্র জানায়, বিএসএফ মরদেহ ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করায় ফেরত পেতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
এম বুরহান উদ্দীন/এমআই