সুনামগঞ্জ পৌর শহরে সাবেক প্রেমিকার বিয়ের খবর পেয়ে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতার এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন এক তরুণী। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় শহরের হাসননগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ (২৮) সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তিনি সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের নৌকাখালী গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পার্থ ও ওই তরুণীর (২৬) মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পড়াশোনা শেষে মেয়েটি এখন নিজ উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। কিন্তু মাঝখানে দুজনের সম্পর্কে ফাটল ধরে। সঞ্জীবন গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন। এর মধ্যেই মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু মেয়ে ও তার পরিবার তাতে রাজি হননি।

এরই মধ্যে পারিবারিকভাবে মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। আগামী রোববার সেই বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এজন্য মেয়েটি উপজেলা থেকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরে তার ভাইয়ের বাসায় আসেন। এখানেই বিয়ের আয়োজন চলছিল। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে মেয়েটি তার বৌদিকে সঙ্গে নিয়ে শহরের হাসননগর এলাকার একটি পারলারে যান। সেখানে ঢোকার আগেই সঞ্জীবন সামনে এসে দাঁড়ান। মেয়েটিকে একটু আড়ালে নিয়েই এলোপাতাড়ি ছুরি মেরে চলে যান তিনি। পরে আশপাশের লোকজন মেয়েটিকে আহত অবস্থায় সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরে রাতেই তাকে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সঞ্জীবন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে শহরের ধোপাখালী শ্মশানঘাট এলাকায় চলে যান। সেখানে তিনি নিজের শরীরে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। তখন আশপাশের লোকজন তাকে ধরে পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ সঞ্জীবনকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মেয়েটির চাচাতো ভাই চিকিৎসক। তিনি জানান, তার বোনের শরীরে ধারালো ছুরির ১০টি আঘাতের চিহ্ন আছে। এর মধ্যে ৯টিই গভীর ক্ষত। সুনামগঞ্জ থেকে প্রথমে তাকে ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে এনে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মেয়েটির পরিবারের আরেক সদস্য জানান, সঞ্জীবন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিলেন। তার (সঞ্জীবন) পরিবারকে জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিবুর রহমান জানান, ঘটনার পর সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থকে আটক করা হয়েছে। তিনি এখন পুলিশি হেফাজতে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এমবি