নারায়ণগঞ্জে চামড়ার বাজারে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১৩:৩৪

পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে চামড়ার বাজার ঘিরে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। সরকার এ বছর চামড়ার দাম বাড়ানোর ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোরবানির পশুর চামড়ার লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখের নিচে নির্ধারণ করা হলেও ব্যবসায়ীদের ধারণা, এবার তা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, লবণের সরবরাহ ঠিক থাকলে এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হলে চামড়া সংরক্ষণে কোনো সমস্যা হবে না। তাদের দাবি, গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা বেড়েছে নারায়ণগঞ্জে।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির জন্য জেলায় চাহিদা রয়েছে ৯৯ হাজার ২৫২টি পশুর। এর বিপরীতে বর্তমানে প্রস্তুত রয়েছে ৮৬ হাজার ৪২৬টি পশু। এর মধ্যে ষাঁড় ৪৮ হাজার ২৭৩টি, বলদ ৬ হাজার ৪৬৫টি, মহিষ ৯১০টি, ছাগল ১০ হাজার ৪৪০টি, ভেড়া ৩ হাজার ৩৮৪টি ও অন্যান্য পশু রয়েছে ১৬১টি। চাহিদার তুলনায় এখনো ১২ হাজার ৮২৬টি পশুর ঘাটতি রয়েছে।
তবে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মান্নান মিয়া বলেন, ঘাটতি যেটুকু আছে, তা আগামী কয়েকদিনে পূরণ হয়ে যাবে। ঢাকার নিকটবর্তী জেলা হওয়ায় সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ উত্তরাঞ্চল থেকে পশু এসে এই ঘাটতি পূরণ হয়।
তিনি আরও জানান, জেলার প্রায় সাড়ে চার হাজার খামার ঈদকে সামনে রেখে পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক খামারে বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে।
চামড়া নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে এক ব্যবসায়ী বলেন, গত বছর সরকার নারায়ণগঞ্জে প্রতি পিস লবণযুক্ত গরুর চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছিল। এবার দাম কিছুটা বাড়ায় লোকসান কাটিয়ে কিছুটা লাভের মুখ দেখার আশা করছি। তবে মৌসুমি চামড়া বিক্রেতারা বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বলেও অভিযোগ তাদের।
চামড়ার নতুন মূল্য নির্ধারণ
গত ২৬ মে সরকার ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। এবছর ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি পিস গরুর চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এছাড়া প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ঢাকায় ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। খাসি ও বকরির চামড়ার বর্গফুট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ২২–২৭ টাকা এবং ২০–২২ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় দুই টাকা বেশি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বড় গরুর চামড়ার চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে কিছুটা দাম নির্ধারণের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের, যাতে বাজারে ভারসাম্য বজায় থাকে।
এদিকে খামারিদের বিষয়ে ডা. মান্নান জানান, গবাদি পশু পালনে জেলার খামারিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা প্রাকৃতিকভাবে খড়, গম, ডালের ভূষি, খৈইল ও কুড়া দিয়ে পশু মোটাতাজাকরণ করেছে।
বাজার স্থিতিশীল থাকলে খামারিরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি সঠিকভাবে চামড়ার মূল্য পেলে চামড়া ব্যবসায়ীরাও দীর্ঘদিনের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
- এএ