জলোচ্ছ্বাসে কুয়াকাটা সৈকতের সড়ক লন্ডভন্ড, তদন্ত কমিটি গঠন

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১৫:১৯

ছবি : বাংলাদেশের খবর
বঙ্গোপসাগরে গভীর জলোচ্ছ্বাসের কারণে কুয়াকাটা সৈকতের সদ্য নির্মিত সড়ক লন্ডভন্ড হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কলাপাড়ার উপকূলীয় এলাকায় এ ঘটনা নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য ও আলোচনা চলছে।
এদিকে, বিষয়টি সামাজিক ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শুক্রবার (৩০ মে) সন্ধ্যার পর কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ ইয়াসীন সাদেককে। কমিটিতে পানিসম্পদ উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী, কলাপাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কমিটি গঠনের চিঠিতে বলা হয়েছে, সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন সড়কটি দৃষ্টিকটু অবস্থায় ভেঙে পড়েছে। রাস্তাটির নির্মাণ কাজ নিম্নমানের লোকাল বালি ও পাতলা সিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে করা হয়েছে। নির্মাণের প্রাক্কলনে সাগরের সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করা হয়নি। স্থানীয় জনগণ, গণমাধ্যম ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও প্রকল্প কমিটি এবং তৎকালীন পৌর কর্তৃপক্ষ করণীয় নেয়নি।
এর আগে, কুয়াকাটা সৈকতের জিরোপয়েন্ট থেকে পূর্বদিকে তিনটি প্যাকেজে মোট দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিগত সরকারের সময় থাকাকালীন মেয়র আনোয়ার হাওলাদার প্রথম দফায় ১৩শ মিটার রাস্তার কাজ শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন। বাকি ৭০০ মিটার কাজ শুরু হয়নি।
তবে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত সাগরের অস্বাভাবিক জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে সৈকতজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সড়কের দুই তৃতীয়াংশ বিধ্বস্ত হয়ে ভেসে যায়। এ ঘটনার খবর তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
অনেকে এই প্রকল্পকে সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ব্যক্তিগত উদ্যোগ বলে মনে করছেন এবং টেন্ডার ছাড়াই আত্মীয়-স্বজন দিয়ে কাজ শুরু করার অভিযোগ তুলেছেন। স্থানীয়রা দাবি করছেন এটি চার কোটি টাকার বাণিজ্যিক প্রকল্প, যা বাস্তবতা যাচাই ছাড়াই সাগরের জলে নির্মাণ করা হয়েছে।
অপরদিকে, আনোয়ার হাওলাদার জানান, প্রকল্প যথাযথ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় শুরু হয়েছে এবং সিসি ঢালাই কাজ এখনও চলমান। পরবর্তীতে ঢেউ প্রতিরোধে গাইডওয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বিল ও অর্থের বিষয়ে প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন। তবে একটি সূত্র জানায়, ঠিকাদারকে মোট ৬৩ লাখ টাকার বিল প্রদান করা হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী নিয়াজুর রহমান মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জাকারিয়া জাহিদ/এআরএস