ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর ওপর হামলা, ওসি প্রত্যাহার

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ০৮:৫৫

ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর ওপর হামলা, ওসি প্রত্যাহার।
ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী বৈশাখী ইসলাম বর্ষার ওপর হামলার ঘটনায় নগরকান্দা থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফর আলীকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করে ফরিদপুর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার (৩১ মে) বিকেলে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের আদেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ শামসুল আজম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জনস্বার্থে ও প্রশাসনিক কারণে নগরকান্দা থানার ওসি মো. সফর আলীকে প্রত্যাহার করে ফরিদপুর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী নেত্রী বর্ষার ওপর হামলার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগে দুটি মামলার বাদী হয়েছেন বর্ষা নিজেই। অন্যদিকে, পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে। এ তিন মামলায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৈশাখী ইসলাম বর্ষা নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের ভবুকদিয়া গ্রামের সাবু শেখের মেয়ে। তিনি জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ও সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে ডাঙ্গী ইউনিয়নের ভবুকদিয়া গ্রামে ছোট বোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করতে গেলে বর্ষার ওপর হামলা চালায় সেকেন কাজী, তার ছেলে সাগর কাজীসহ কয়েকজন। বর্ষার অভিযোগ, হামলাকারীরা তার চুলের মুঠি ধরে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করে। ওই সময় পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে উত্তেজিত লোকজন তাদের ওপরও হামলা চালায়।
এর প্রতিবাদে সেখানে ছুটে যান বৈষম্যবিরোধী নেতারা। তখন তাদের ধাওয়া দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা।
এ ঘটনার পর বৈশাখী ইসলাম বর্ষা জানান, গত কয়েকদিন ধরে তার ছোট বোনকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল স্থানীয় জালাল বেপারীর ছেলে শরিফ বেপারী। এর প্রতিবাদে থানায় অভিযোগ করলে ওই এলাকায় থানা পুলিশ ছুটে যায়। এ সময় উত্ত্যক্তকারী যুবককে পুলিশ আটক করলে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। তখন শরিফ বেপারীর পক্ষ নিয়ে সেকেন কাজী ও তার ছেলে সাগর কাজীসহ কয়েকজন মিলে মারধর করেন।
তিনি বলেন, হামলাকারীরা সকলে বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি করেন ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার সমর্থক। ফেসবুক লাইভ ও একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেন যে, বিএনপি হামলা করেছে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হামলাকারী সেকেন কাজী ও সাগর কাজী আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেনের সমর্থক ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তারা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার সমর্থক পরিচয় দেন। এছাড়া বদিউজ্জামান তারা মোল্যা ও বিএনপির অন্যান্য নেতার ছবি সংবলিত বিভিন্ন ফেস্টুন দেখা যায় সাগর কাজীর।
এদিকে শনিবার (৩১ মে) দুপুরে বর্ষার বাড়িতে ছুটে যান উপজেলা বিএনপির নেতারা। তখন নেতাদের উপস্থিতিতে বর্ষা বলেন, হামলাকারীরা যে দলেরই হোক, বিচার করতে হবে। বিএনপির বা আওয়ামী লীগের হলেও বিচার করতে হবে।
তখন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যা দাবি করেন, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ কর্মী। তিনি বলেন, ‘হামলাকারীদের কেউ যদি বলতে পারে বিএনপির লোক, আমার যে শাস্তি হয় মেনে নেব। হামলাটা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা করেছে।’
নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত শরীফ বলেন, বিএনপিকে দায়ী করার জন্য মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। বিএনপির কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আসিফ ইকবাল জানান, এ ঘটনায় নগরকান্দা থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলায় বাদী হয়েছেন বৈশাখী ইসলাম বর্ষা। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে থানা পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় উত্ত্যক্তকারী শরিফ বেপারীসহ একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অপূর্ব আসিম/এমবি