পাবনার চতুর হাটে সারি সারি গরু, নেই ক্রেতা

বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১০:৫৩

পাবনার চতুর হাটে সারি সারি গরু, নেই ক্রেতা—হতাশ বিক্রেতারা। ছবি : বাংলাদেশের খবর
কোরবানির ঈদ আর হাতে গোনা কয়েকদিন। অথচ পাবনার বেড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চতুর পশুর হাটে জমে উঠেনি গরু কেনাবেচা। হাটজুড়ে গরুর সরবরাহ থাকলেও ক্রেতা সংকটে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। কাঙ্ক্ষিত দাম তো দূরের কথা, ন্যায্য মূল্য নিয়েই অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তারা। এতে খামারি ও ব্যাপারীদের চোখেমুখে স্পষ্ট হতাশার ছাপ।
সরেজমিনে চতুর হাট ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন আকার ও রঙের অসংখ্য গরু নিয়ে বিক্রেতারা ক্রেতার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। হাটে গরুর সরবরাহ প্রচুর থাকলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি খুবই কম। যে কয়েকজন ক্রেতা আসছেন, তারাও দাম শুনে দর কষাকষি করে চলে যাচ্ছেন। তারা কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন খুব কম।
নাটোর থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী মো. আক্কাস আলী বলেন, প্রায় ১৫টি বড় সাইজের গরু নিয়ে এসেছি। আশা ছিল ভালো দাম পাব। কিন্তু সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে গেলেও তেমন কোনো ক্রেতাই পেলাম না। গো-খাদ্যের যে দাম, তাতে গরু লালন-পালনে অনেক খরচ হয়েছে। এখন যদি ভালো দামে বিক্রি করতে না পারি, তাহলে লোকসানে পড়তে হবে।
স্থানীয় খামারি আব্দুল করিম জানান, বাড়িতে পোষা দুটি গরু অনেক যত্ন করে বড় করেছি কুরবানিতে বিক্রি করব বলে। হাটে এনেছি, কিন্তু ক্রেতারা যে দাম বলছে, তাতে খরচের টাকাও উঠবে না। গত বছর এ সময়ে হাটে ক্রেতাদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা ছিল না। আর এ বছর পুরো উল্টো চিত্র।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর গরুর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি চাওয়া হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন। হাটে গরু দেখতে এসেছেন শহরের এক ক্রেতা। তিনি জানান, বিক্রেতারা দাম ছাড়তে চাইছেন না। গত বছরের তুলনায় প্রতিটি গরুতে প্রায় ২০-৩০ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে। আমাদেরও তো বাজেট সীমিত। তাই একটু দেখেশুনে, দরদাম করে কেনার চেষ্টা করছি।
তবে বিক্রেতাদের দাবি, গো-খাদ্য, ওষুধপত্র ও শ্রমিকের মজুরি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় গরু প্রতিপালনের খরচ অনেক বেড়েছে। তাই বেশি দামে বিক্রি না করতে পারলে তাদের লোকসান গুনতে হবে।
হাট ইজারাদার কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখনও ঈদের কয়েকদিন বাকি আছে। আশা করছি, শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের সমাগম বাড়বে এবং বেচাকেনা জমে উঠবে। আমরা বিক্রেতাদের সব ধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।
সব মিলিয়ে কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে পাবনার বেড়া চতুর হাটে গরুর বিশাল সরবরাহ থাকলেও ক্রেতা সংকটের কারণে বিক্রেতারা গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। ঈদের আগে বাজারের এ চিত্র না বদলালে অনেক খামারি ও ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিক্রেতারা এখন শেষ মুহূর্তের আশায় দিন গুনছেন—যদি ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ে এবং তাদের মুখে হাসি ফোটে।
বাবুল হোসেন/এমবি