৯০ দিন বন্ধ সুন্দরবনের দ্বার, সজীবতা ফিরবে প্রাণ-প্রকৃতিতে

বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১৪:৩০

ছবি : বাংলাদেশের খবর
মাছ ও বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি, বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় সুন্দরবনে টানা তিন মাসের জন্য দর্শনার্থী ও বনজীবীদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ।
রোববার (১ জুন) থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এ বনের দ্বার। বন বিভাগের দাবি, এতে সতেজতা বাড়বে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতিতে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে রয়েছে ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী, ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী, ২৯০ প্রজাতির পাখি ও ৩৪৪ প্রজাতির উদ্ভিদ। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বানর, কুমির, গুইসাপসহ বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও মাছ এখানে বাস করে। তবে এর মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি ও ৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে।
বন কর্মকর্তারা জানান, দর্শনার্থীদের ভিড়, বনজীবিদের কার্যক্রম ও চোরাশিকারীদের দাপটে সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম হুমকিতে পড়ে। তাই প্রতি বছর প্রজনন মৌসুমে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
শরণখোলা উপজেলার বন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে এ সময় বৈধভাবে কেউ প্রবেশ করবে না। তবে অবৈধভাবে অপরাধীদের প্রবেশ ঠেকানোই এখন চ্যালেঞ্জ। যদি অপরাধীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা যায়, তাহলে বন বিভাগের উদ্দেশ্য সফল হবে। আমরা যারা বনজীবী রয়েছি, তারাও লাভবান হব।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সময় বন বিভাগের যোগসাজশে অসাধু জেলেরা বনের মধ্যে প্রবেশ করে মাছ আহরণ করে। নিষেধাজ্ঞার সময় যাতে কেউ বনে প্রবেশ না করতে পারে, এজন্য বন বিভাগের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সদস্য মো. নূর আলম শেখ।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন আমাদের মায়ের মতো। তবে সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট যেসব অপরাধ ঘটে থাকে, সেগুলো মানুষই করে। আর সুন্দরবন রক্ষার দায়িত্বও কোনো না কোনো মানুষের। রক্ষার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে বন রক্ষায়।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এ সময় স্বাভাবিকের তুলনায় টহল বৃদ্ধি করা হবে। নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে সুন্দরবনে প্রাণিকুল ও মৎস্য ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের নড়-নদীতে থাকা বেশিরভাগ মাছ ও জলজ প্রাণীর প্রজনন মৌসুম জুন-জুলাই মাস। এ সময় আমরা যদি বনকে কোলাহলমুক্ত রাখতে পারি, তাহলে বন্য প্রাণীদের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সুন্দরবন আরও ভালো থাকবে।
ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ থাকত। পরে ২০২২ সালে মৎস্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ সময় কাজ হারানো জেলেদের মৎস্য অধিদপ্তর থেকে খাদ্য সহায়তা করা হয়ে থাকে।
শেখ আবু তালেব/এমবি