বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের রোমজাইপুর থেকে উড়াবুনিয়া পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীভাঙন রোধে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

বুধবার (৪ জুন) দুপুরে রোমজাইপুর পূর্বপাড়া ঘোষিয়া খালীর তীরে আয়োজিত এ মানববন্ধনে তিন শতাধিক ভুক্তভোগী অংশ নেন।

তারা ‘এখনই টেকসই ভেড়িবাঁধ চাই’, ‘জীবনের বিনিময়ে ফেরি পাচ্ছি, আমাদের চাই টেকসই বাঁধ’, ‘আমাকে বিক্রি করো, কিন্তু বাঁধ দাও’—এমন নানা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান নেন।

মানববন্ধনে পেড়িখালী ইউনিয়নের ৫নং ইউপি সদস্য বয়জিৎ শেখ, মহিলা সদস্য রিনা বেগম হিনা, সন্ধ্যা রানী, এলাকাবাসীর পক্ষে তুহিন মোল্লা, শামীম খান, গিয়াস মোল্লা, বাগেরহাট জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফাত্তাইন নাঈম, ‘ফাইট ফর কোস্টাল রাইটস অ্যান্ড জাস্টিস’-এর প্রতিষ্ঠাতা মো. মাহফুজ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি আবদুল্লাহ শেখ ও উদ্যোক্তা ফিরোজ মাঝি বক্তব্য রাখেন।

স্থানীয় উদ্যোক্তা ফিরোজ মাঝি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই সরকারের কাছে একটাই দাবি—হয় আমাদের টেকসই বাঁধ নির্মাণ করে দাও, না হয় আমাদের মেরে ফেলো। নদীভাঙনের কারণে আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বুকের ওপর দিয়ে জাহাজ চলে যায়, অথচ সরকার আমাদের জন্য কিছুই করে না। এই জাহাজের পানির ধাক্কায় ভাঙন আরও বেড়ে যাচ্ছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ফাত্তাইন নাঈম বলেন, ‘নদীভাঙন এখানকার মানুষের মৌলিক অধিকারকে ব্যাহত করছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই, যেন দ্রুত একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা হয়।’

‘ফাইট ফর কোস্টাল রাইটস অ্যান্ড জাস্টিস’-এর প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ বলেন, ‘উপকূলীয় অধিকার রক্ষায় আমরা কাজ করছি। রোমজাইপুর-উড়াবুনিয়া এলাকার নদীভাঙন একটি মারাত্মক সংকট। অবিলম্বে বেড়িবাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ নিতে হবে।’

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আকমল উদ্দিন জানান, ‘নদীভাঙনের কারণে রাস্তা ভেঙে গেছে। সেই ভাঙা রাস্তা দিয়ে ভ্যান চালিয়ে বাজারে যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে আমার পা ভেঙে গেছে। কবে আমাদের এই দুর্ভোগ শেষ হবে?’

৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বয়জিৎ শেখ বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে নদীভাঙনের কবলে পড়ছে এই এলাকা। বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে গ্রামটাই হারিয়ে যাবে।’

মহিলা ইউপি সদস্য রিনা বেগম হিনা বলেন, ‘প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এই নাম মানচিত্র থেকেই মুছে যাবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা তুহিন মাঝি অভিযোগ করেন, ‘নদী খননের নামে অপরিকল্পিত কাজের ফলে আমাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কেউ নিরাপদে থাকতে পারছে না। মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে, বাল্যবিবাহ বাড়ছে।’

এ বিষয়ে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী বলেন, ‘আমরা এলাকাটি কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। এখানে অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কীভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা বিবেচনা করছি।’

তিনি আরও জানান, ঈদের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিয়ে এলাকা পুনরায় পরিদর্শন করা হবে এবং দ্রুত সময়ে সমাধান আশা করা যাচ্ছে।

শেখ আবু তালেব/এআরএস