হারাম শরিফে চাঁদপুরের দুই যুবকের নিরলস খেদমত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁদপুর
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ১৯:৪৬
-68404e3fa7880.jpg)
ছবি : সংগৃহীত
যেখানে বহু মানুষ জীবনে অন্তত একবার হজ পালনের সুযোগ লাভের জন্য প্রার্থনা করেন, সেখানে চাঁদপুরের দুই তরুণ দীর্ঘদিন ধরে পবিত্র মক্কায় হাজীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।
তাদের একজন হলেন হাফেজ মুহাম্মদ হাসান মানছুর মাক্কী। যিনি টানা ১১ বছর ধরে মসজিদুল হারামে হাজীদের সহায়তা করে যাচ্ছেন। অপরজন হাফিজ আহমাদ। যিনি কচুয়ার কৈটোবা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এ বছর থেকে বাংলাদেশ হজ মিশনে দোভাষী ও সহায়ক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন।
জানা যায়, চলতি বছর মক্কায় বিভিন্ন দেশের অন্তত ৪০ জন যুবক হাজীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে চারজন বাংলাদেশি। চাঁদপুরের দুইজন ছাড়াও রয়েছেন কক্সবাজারের শিহাব আব্দুস সালাম এবং লক্ষ্মীপুরের সৈয়দপুর গ্রামের মাহবুবুর রহমান।
মক্কা নগরীর পবিত্র মসজিদুল হারামে কর্মরত হাফেজ মানছুর অনুবাদক হিসেবে হাজীদের চিকিৎসা সহায়তা, ধর্মীয় পরামর্শ ও ভাষাগত জটিলতা নিরসনে ভূমিকা রাখছেন। অসুস্থ হাজীদের চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো, প্রয়োজনে দেশে ফেরত পাঠানোসহ হজ বিষয়ক সমন্বয়ের কাজ তিনিই দেখভাল করেন। প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করলেও মানছুর বলেন, ‘আমি আল্লাহর ঘরের অতিথিদের সেবা করছি—এই ভাবনাই শান্তি দেয়।’
হাফেজ মানছুর ২০১৪ সালে সৌদি সরকারের বৃত্তি নিয়ে মক্কার জামেয়া উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে অনার্স ও উচ্চতর ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে পবিত্র হারামে অনুবাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
হাফিজ আহমাদের গ্রামের স্কুলশিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হাফিজ আহমাদ আমাদের এলাকার গর্ব। আল্লাহ যেন তার খেদমত কবুল করেন।’
শাহরাস্তির নুনিয়া গ্রামের গণমাধ্যমকর্মী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘এই সেবাকর্ম শুধু গর্বের নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বড় অনুপ্রেরণা।’
চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জোবায়েদ কবির বাহাদুর বলেন, ‘মানছুরের মতো যুবকেরা দেশের বাইরে থেকে দেশের সুনাম বাড়াচ্ছেন। এটি আমাদের জন্য গর্বের।’
ভোলদিঘি কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি হজ করতে গিয়ে এই ছেলেদের খেদমত পেয়েছি। তারা আন্তরিক, ধর্মপ্রাণ ও ধৈর্যশীল। এ সেবা নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ।’
ধর্মপ্রাণ মানুষের মতে, পবিত্র মক্কায় হাজীদের সেবা শুধু একটি পেশা নয়, বরং ইবাদতের অংশ। ভাষাগত জটিলতা দূর করা, অসুস্থদের সহায়তা এবং হজ পালনে সহযোগিতা করায় বিশ্ব মুসলিম সমাজে বাংলাদেশকে মানবিক ও দায়িত্বশীল জাতি হিসেবে তুলে ধরছে।
চাঁদপুরের এই দুই তরুণ তাদের আত্মত্যাগ, নিষ্ঠা ও ধর্মীয় দায়িত্ববোধের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের কাছে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
আলআমিন ভূঁইয়া/এআরএস