কক্সবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীন সেনাবাহিনীর হাতে আটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১৫:৪৩

কক্সবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীনুর রহমান ওরফে শাহীন। ছবি : বাংলাদেশের খবর
কক্সবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীনুর রহমান ওরফে শাহীন ডাকাতকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল ১০ টার দিকে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের জাউচপাড়া নামক এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের সময় ডাকাত শাহীন তার শ্বশুর শাকের মেম্বারের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনী একটি চৌকস দল ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করতে সক্ষম হয়। শাহীন ডাকাত আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঝিলংজা ক্যাম্পের দায়িত্বরত মেজর শাহরিয়ার শাহীন ডাকাতকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন- এ ব্যাপারে সেনাবাহিনী পক্ষ থেকে গর্জনিয়া এলাকায় প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হবে।
রামু উপজেলার পূর্বাঞ্চলের অস্ত্র, গরু, মাদক চোরাচালানসহ বহু মামলার আসামি, শাহীনুর রহমান শাহীন ওরফে ডাকাত শাহীনের ডেরায় গত ২৫ মে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। ওই অভিযানে অস্ত্র, মাদক, জাল টাকা ও ওয়াকিটকি উদ্ধার হলেও কৌশলে সটকে পড়ে ডাকাত শাহীন।
র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক (সহকারী পুলিশ সুপার) আ. ম. ফারুক জানিয়েছেন- কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডস্থ মাঝিরঘাটা গ্রামের পলাতক আসামি শাহীনুর রহমান শাহীন অস্ত্রধারী ডাকাত। সে দীর্ঘদিন বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। তার বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা রয়েছে।
পুলিশের তথ্য সূত্র বলছে, সিআর ও জিআর মামলা এবং জিডিসহ প্রায় ১৯ মামলার পলাতক আসামি ডাকাত শাহীন। তার দুই ডজন মামলার মধ্যে ৯টি ডাকাতি, ডাকাতি প্রস্তুতি ও ছিনতাই, ৪টি হত্যা মামলা, দুটি অস্ত্র মামলা, দুটি মাদক মামলা এবং বাকিগুলো বিভিন্ন থানায় জিডি হিসেবে রয়েছে।
জানা গেছে, সীমান্ত জনপদের এক আতঙ্কের আরেক নাম ডাকাত শাহীন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ সীমান্ত এলাকার লোকজন। তার বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। ফলে বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি ও কক্সবাজারের রামু উপজেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে শাহীনুর রহমান শাহীন ওরফে ডাকাত শাহীন। খুন, ডাকাতি, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, একচ্ছত্রভাবে গরু ও মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ, মতের বিরোধ থাকা লোকজনকে এলাকা ছাড়াসহ এমন কোন অবৈধ কাজ নাই সে করে না।
শাহীনুর রহমান শাহীন ওরফে ডাকাত শাহীন হচ্ছে মূলত ধনীর ঘরের দুলাল। কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়ার জমিদার হাজী ইসলামের সন্তান সে। বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল সন্তান বড় হয়ে গর্জনিয়ার হাল ধরবে। হাল ধরেছে ঠিকই, তবে তা সমাজসেবা বা এলাকার মানুষের কল্যাণে নয়। একের পর খুন, ডাকাতি, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, একচ্ছত্রভাবে গরু, মাদক ও সিগারেট পাচার নিয়ন্ত্রণ, মতের বিরোধ থাকা লোকজনকে এলাকা ছাড়াসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে নাইক্ষংছড়ি ও রামু সীমান্তের জনপদে মধ্যে। গর্জনিয়ায় পৃথক পুলিশ ফাঁড়ি, বিজিবি ক্যাম্প থাকলেও সেখানে আইন চলে শাহীনের। বলা চলে শাহীনের হাতে স্বাধীন দেশের পরাধীন এক ভূখণ্ড রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা।
শাহীনের হাতে খুনের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিনিয়ত, প্রকাশ্যে করা খুনের তথ্য এলাকাবাসী জানলেও সীমান্তে লোকচক্ষুর আড়ালে তৈরী করা মৃত্যুপুরীর পরিসংখ্যান থেকে যাচ্ছে আড়ালে। যুবক, বৃদ্ধ, নারী এমনকি পেটের অনাগত সন্তানও রেহাই পায়নি শাহীনের হাত থেকে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পড়াশোনার জন্য পরিবার থেকে শাহীনকে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে পাঠালেও সেদিকে মন না দিয়ে চলে আসেন গ্রামে। অপরাধ জগতে পা দেয় ঈদগড়ের ভয়ংকর ডাকাত কালু, কলিমুল্লাহসহ কয়েকজনের হাত ধরে। শুরুতে ঈদগড় ঈদগাও সড়কে ডাকাতি করতে গিয়ে আটক হয়ে জেলে যায় শাহীন। সেখান থেকেই ঘুরে যায় জীবন। সন্ত্রাসীদের অনুসারী থেকে হয়ে উঠে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান। ২০১২ সালে সন্ত্রাস জগতে পা রাখা শাহীন এখন সীমান্তের অপরাধ জগতের ডন।
সূত্রে জানায়, ৫শ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত গরু অবৈধভাবে প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রতিটি গরু থেকে ৩ হাজার টাকা করে দিতে হয় শাহীনকে। শুধু গরু নয়, সাথে আসে আইস, ইয়াবা, সিগারেটসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্য যার মূল নিয়ন্ত্রক হচ্ছে শাহীন। গরু, আইস, ইয়াবা, সিগারেট চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে সীমান্তের এই এলাকায় বেড়ে যায় খুনোখুনির ঘটনাও। শাহীনের গরু এবং ইয়াবা পাচারে কেউ ন্যূনতম বাঁধা হলেও তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানায় এলাকাবাসী। এক এক করে সীমান্তের এই এলাকাগুলোতে গত কয়েক বছরে অন্তত ডজনাধিক খুনের নেতৃত্ব দিয়েছে শাহীন।
২০২৩ সালের ৩ মার্চ। সেদিন ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হয় গর্জনিয়ার বেলতলীর মানুষ। এলাকাবাসীরা জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ির শফিউলাহর ছেলে ইরফানকে ডাকাত শাহীন তার নিজের মোটরসাইকেলে বসিয়ে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করে নৃশংসভাবে।
- ইমতিয়াজ মাহমুদ ইমন/এমআই