Logo

সারাদেশ

কোরবানির ঈদ ঘিরে বগুড়ার কামারশালায়ও বেড়েছে ব্যস্ততা

Icon

বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১৬:২৫

কোরবানির ঈদ ঘিরে বগুড়ার কামারশালায়ও বেড়েছে ব্যস্ততা

কামারপল্লীতে এখন দিন-রাত চলছে দা, ছুরি, বটি, চাপাতি তৈরির কাজ। ছবি : বাংলাদেশের খবর

ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী কামারপল্লী আবারও কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে। সদরের আশোকোলা ইউনিয়নের কামারপল্লীতে এখন দিন-রাত চলছে দা, ছুরি, বটি, চাপাতি তৈরির কাজ। কোরবানির ঈদে পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য এসব সরঞ্জামের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কামারশিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

প্রায় দেড়শো বছরের পুরোনো এই পল্লীতে বর্তমানে ৩০টি কামারের দোকান রয়েছে। এখানে অন্তত দেড়শো শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকরা দিনে ২০ থেকে ৩০টি ধারালো সরঞ্জাম তৈরি করছেন। কিছু শ্রমিক অর্ডার অনুযায়ী কাজ করছেন, আবার কেউ কেউ দোকানে প্রস্তুত করে রাখছেন বিক্রির জন্য।

কামার শিল্পীরা জানান, আগে একটি দা বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, তখন লোহার দাম ছিল ৭ থেকে ৮ টাকা সের। এখন লোহার দাম ১২০ টাকা কেজি। তবে, দাম বেড়েছে, কিন্তু ক্রেতাদের আগ্রহ কমেছে। চাইনিজদের তৈরি আধুনিক সরঞ্জাম বাজার দখল করে নিয়েছে, ফলে কামার শিল্পে ভাটা পড়েছে। 

প্রবীণ ব্যবসায়ী রোজিত কর্মকার বলেন, এই ব্যবসা পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া। প্রায় ৩৫ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে জড়িত। আগে দুই থেকে আড়াইশো টাকা কামায় করতে অনেক হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন সহজেই হাজার টাকা আয় করা যায়। আগের থেকে ব্যবসার গতিও বেড়েছে। আগে একটা দা বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তখন লোহার দাম ছিল ৭ থেকে ৮ টাকা সের। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে হাজার টাকা। লোহার দাম ১২০ টাকা কেজি।

শ্রী সুনীল চন্দ্র কর্মকার বলেন, কাঁচামালের কারণে দাম একটু বেড়েছে , তবে ক্রেতাদের ভিড় ঠিকই রয়েছে। গ্রামের হাট-বাজার ছাড়াও শহর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসছেন কামার পট্টিতে।

তিনি আরও বলেন, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১শত থেকে খাত ভেদে দেড়শত টাকা, দা ৮শত থেকে ৯শত টাকা, বটি ৫শত থেকে ১২শত  উপরে টাকা, পশু জবাই ছুরি ১২শত থেকে ১৬শত টাকা বিক্রি করছি।

জয় কর্মকার বলেন, কোরবানির ঈদের মতোই আমরা আনন্দে কাজ করে থাকি। ঈদের আমেজকে ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে। বছরে অন্য সময় আমি স্বর্ণের কাজ করি। আগের তুলনায় এখন লাভের অংশ কম। সনাতনী পদ্ধতি ছেড়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করছি এতে করে কাজের গতি ও বেড়ে যায়। এছাড়া ছুরি, কাটারি, বটি, দা ও কুঠার ইত্যাদি তৈরিতে এঙ্গেল, ব্লাকবার, রড, স্টিং, রেললাইনের লোহা, গাড়ির পাত ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি।

সুদশন কর্মকার বলেন, আগের মত আর তেমন কাজ নেই। সারা বছর কাজ না থাকায় আমরা বছরে এই উৎসবের অপেক্ষায় থাকি। বাপদাদার পেশা ছাড়তেও পারিনা। তারপরেও কয়লার দাম বেশি হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হয়। পরিশ্রম বেশির কারণে এ পেশায় কাজ করা লোক ও এখন আর পাওয়া যায় না, আগের কয়লা ও লোহার দাম কম ছিল তাই খাটা-খাটনি করে ভালো দাম পাওয়া যেত। এখন তেমন টা হয় না।

কামার শিল্পীদের কাছে দা, ছুরি ক্রয় করতে আসা সুজন মিয়া বলেন, কোরবানির ঈদের সময় কসাই পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই একটা নতুন দা, ছুরি কিনেছি, আর পুরোনো কিছু চাপতি, ছুরি শাণ দিয়ে নিচ্ছি নিজেরাই কাজে লেগে যাব। গেল বছরের চেয়ে এ বছর পুরোনো জিনিস শাণ (ধারালো) করতে মানভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি নিচ্ছে।

কামারপল্লীতে ঘুরতে আসা সানোয়ার বলেন, আমরা প্রতিবছর কোরবানি দিয়ে থাকি। সেই সুবাদে আমি এখানে এসে চামড়া আলাদা করতে চাকু বানানোসহ পুরানো চাকু, দা, বটি শাণ দিতে নিয়ে আসি। এখানকার কাজের মান অনেক ভালো। এক সপ্তাহ আগে অর্ডার দিয়েছিলাম আজ নিতে এসেছি।

জুয়েল হাসা্ন/এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ঈদুল আজহা ঈদুল আজহার সব খবর

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর