বরগুনায় ডেঙ্গু বিপর্যয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি

বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ১৯:৩৫
-684834bf16095.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
বরগুনায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল ৯টায় পৌর মার্কেট ও আল মিজান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারী কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পরে বেলা ১১টায় একই স্থানে বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, সারা দেশের ডেঙ্গু রোগীর প্রায় এক চতুর্থাংশই বরগুনায়। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জেলায় অকাল মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। এর মধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে, বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছেন।
জেলার ১২ লাখ মানুষের জন্য একমাত্র চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র ১০ জন চিকিৎসক রয়েছেন, যাদের মধ্যে পাঁচ জন ছুটিতে আছেন। এসব কারণে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারণে স্থানীয় উদ্যোক্তা মোনালিসা জেরিন, কিশোরী উপমাসহ ১০ জনের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটেছে। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ছে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে আরও বেশি প্রাণহানি হতে পারে। এই সংকট সামাল দেওয়া রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ বলেন, দেশের ডেঙ্গু রোগীর প্রায় ৪ হাজার ৫শ জনের মধ্যে বরগুনায় প্রায় দেড় হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মাত্র ১০ জন চিকিৎসক নিয়ে এই জরুরি অবস্থার মোকাবেলা সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে বরগুনা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম গঠন করা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পৌর প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তবে এখনও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। চিকিৎসক ও নার্সের তীব্র সংকট রয়েছে।
বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ডেঙ্গু মশার ভয়াবহ উপদ্রব এবং বরগুনার চিকিৎসা ব্যবস্থার অচল অবস্থার কারণে বরগুনায় দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, অথচ রাষ্ট্রের কোনও মাথাব্যথা নেই। এভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চলতে পারে না।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন বলেন, বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বরগুনা পৌরসভা, স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতাই এর মূল কারণ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বরগুনা সফরের অনুপস্থিতি নিয়ে জনগণের কাছে জবাবদিহি প্রয়োজন। এ ব্যর্থতার জন্য তাদের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
বর্তমানে বরগুনা জেলায় ১৫০০ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং জেনারেল হাসপাতালে ১৫৮ জন ভর্তি রয়েছে। সাবেক জেলা বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার কন্যা উপমা ও সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল হাসান ফরহাদের কন্যা মোনালিসা জেরিনসহ কয়েকজনের অকাল মৃত্যু জেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সত্ত্বেও বরগুনাকে ডেঙ্গু হটস্পট হিসেবে ঘোষণা না করায় এবং জরুরি পদক্ষেপ না নেয়ায় সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমেছে।
খান নাঈম/এআরএস