উত্তরবঙ্গে পর্যটনের মুকুট তিস্তা ব্যারেজ

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ২০:৪৪
-684844dc8e5d9.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
তিস্তা ব্যারেজ বা তিস্তা সেচ প্রকল্প বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প হলেও এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হিসেবেও বিখ্যাত।
তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এই ব্যারেজের একপাশে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন এবং অন্য পাশে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিসা চাপানী ইউনিয়নের ডালিয়া অবস্থিত।
কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এটি এক অনন্য গন্তব্যস্থল।
তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে, আর ক্যানেল সিস্টেমের নির্মাণ কাজ হাতে নেয়া হয় ১৯৮৪-৮৫ সালে। প্রথম পর্যায়ের কাজ ১৯৯৮ সালের জুনে সম্পন্ন হয়। বর্তমানে লালমনিরহাট ও নীলফামারীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান এটি। ঈদ, পূজা এবং অন্যান্য ছুটির দিনে হাজারো ভ্রমণপ্রেমী দর্শনার্থী এখানে ভিড় করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার দর্শনার্থী তিস্তা ব্যারেজে ঘুরতে আসেন। তবে ছুটির দিনে সংখ্যাটা ৩০ থেকে ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ব্যারেজের অপরূপ সৌন্দর্য, চারপাশের সবুজ বন, ফুলের বাগান, নদীর পুরনো গতিপথ ও সিল্ট ট্রাপ পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এখানে ছোট নৌকা ভ্রমণ, মাছ ধরা এবং পিকনিকের ব্যবস্থা রয়েছে। নদীর বিখ্যাত মাছ বৈরালীও দর্শনার্থীদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ।
ব্যারেজ প্রবেশপথে গড়ে উঠেছে নানা ছোট ব্যবসা। ফুচকা, চটপটি থেকে শুরু করে মোবাইল কভার, সানগ্লাসসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, "কয়েক বছর আগে এখানে কিছুই ছিল না, এখন বিশেষ করে ঈদে ব্যবসা ভালো হয়।"
দিনাজপুর থেকে আসা রিপন ইসলাম বলেন, ‘বন্ধুদের কাছ থেকে তিস্তা ব্যারেজের গল্প শুনে এবার পরিবার নিয়ে এলাম। প্রকৃতির এমন অপূর্ব সৌন্দর্য আগে দেখিনি।’
পঞ্চগড়ের কলেজছাত্রী মুন্নি বলেন, ‘ফেসবুকে ছবি দেখেই আগ্রহ ছিল, কিন্তু বাস্তবে এসে বুঝেছি ছবির চেয়েও বেশি সুন্দর এটি। এখানে এসে এক শান্তির অনুভূতি পাই।’
তবে পর্যটকরা অভিযোগ করেন পর্যাপ্ত টয়লেটের অভাব, ময়লা-আবর্জনা ফেলা এবং গাড়ি পার্কিংয়ের সংকুলান রয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে এসব সমস্যার সমাধানে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পরিকল্পনায় রয়েছে গাড়ি পার্কিং জোন, গণশৌচাগার, বিশ্রামাগার, মানসম্মত হোটেল-রেস্টুরেন্ট এবং ডাস্টবিন স্থাপন। একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজও চলছে।
দোয়ানি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এরশাদুল হক জানান, ‘ছুটির দিনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন এবং মোবাইল টিম নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে।’
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘তিস্তা ব্যারেজ শুধু সেচ প্রকল্প নয়, এটি পর্যটন সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপ নিচ্ছে। আমরা চাই এখানে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন এলাকা গড়ে উঠুক।’
নদীর বিশালতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রাণবন্ত মানুষের মেলবন্ধনে তিস্তা ব্যারেজ এখন স্থানীয় অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যথাযথ পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে এটি আরও উন্নত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাসেদ খান/এআরএস