ঈদে দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর পঞ্চগড়ের ইকো পার্ক

এসকে দোয়েল, পঞ্চগড়
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১৫:২৭
-68494c092ab3f.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ঈদের দিন থেকে দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের গড়ে তোলা নতুন পর্যটনকেন্দ্র ‘ইকো পার্ক’। করতোয়া নদীর তীরে মিরগড় এলাকায় নির্মিত এ পার্ক যেন এক টুকরো সবুজের স্বপ্ন হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা বলছেন, পঞ্চগড়ে এত চমৎকার একটি বিনোদন স্পট তারা কল্পনাও করেননি। কেউ কেউ বলছেন, তেঁতুলিয়াকেই এতদিন একমাত্র পর্যটনকেন্দ্র মনে হলেও জেলা সদরে নতুন এই পার্কটি তাদের মুগ্ধ করেছে।
পর্যটক ইকবাল ও সুমি, কায়সার ও লাবনী দম্পতি বলেন,‘জেলা শহরের ভেতরে নদীর পাড়ে এত সুন্দর একটা পার্ক—ভাবতেই পারিনি। পরিবার নিয়ে ঘোরার জন্য দারুণ জায়গা। সুযোগ পেলে আবারও আসব।'
স্থানীয় দর্শনার্থী রাবেয়া বেগম ও আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘জেলায় আগে তেমন বিনোদনের জায়গা ছিল না। এখন পরিবার নিয়ে ঈদ বা ছুটির দিনে আসার একটা ভালো জায়গা হয়েছে।’
ব্যাংক কর্মকর্তা খোরশেদ ও তৌফিক বলেন, ‘পার্কটি দেখে সত্যিই অবাক হয়েছি। তবে টিকিটের দাম যদি একটু কম হতো, তাহলে আরও বেশি মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে আসতে পারত।’
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২৫ একর সরকারি খাসজমি উদ্ধার করে ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় ইকো পার্কটি। এতে রয়েছে কৃত্রিম লেক, পানির ফোয়ারা, হাঁটার পথ, বসার জায়গা, নামাজের জায়গা ও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। পার্কজুড়ে লাগানো হয়েছে ২০ হাজারের বেশি ফুল ও ফলের গাছ। রয়েছে শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থাও।
পার্কটিতে ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ৩০ টাকা টিকিট কেটে প্রবেশ করছেন। কেউ হাঁটছেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউ পরিবারের সঙ্গে কাটাচ্ছেন নির্ভেজাল সময়। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে পার্কটি। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ইকো পার্ক ঘিরে বদলে যেতে শুরু করেছে স্থানীয় অর্থনীতি। গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকান, খাবারের স্টল এবং ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের ভিড়। অনেকেই বলছেন, এই পার্ক ঘিরে তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা।
পার্কের ম্যানেজার নয়ন তানবিরুল বারী বলেন, ‘দর্শনার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন রাইড ও অবকাঠামো সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার কাজ চলমান রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, ‘একসময় পতিত ছিল এই জমি। এখন এটি জেলার অন্যতম বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পার্কের সৌন্দর্যবর্ধন ও অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলবে।’
ঈদ উপলক্ষে ইকো পার্ক ছাড়াও জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পট যেমন তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার, মহানন্দা নদীর পাড়, সমতলের চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, অমরখানা মুক্তাঞ্চল পার্ক, দেবীগঞ্জ ডিসি পার্ক, ময়নার চর, মহারাজার দিঘী, মির্জাপুর শাহী মসজিদ ও পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনেও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয়দের আশা, ইকো পার্কটি সময়োপযোগী রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের অন্যতম পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নেবে।
এআরএস