Logo

সারাদেশ

আলফাডাঙ্গায় ছাত্রলীগ-সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ধরতে পুলিশের অভিযান, গ্রেপ্তার ৭

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১৯:৫২

আলফাডাঙ্গায় ছাত্রলীগ-সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ধরতে পুলিশের অভিযান, গ্রেপ্তার ৭

দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। ছবি : সংগৃহীত

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র মহড়া এবং যুবদল-ছাত্রদলের নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকির ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার গভীররাত থেকে বুধবার (১১ জুন) সকাল পর্যন্ত গোপালপুর ইউনিয়ন ও আশপাশের এলাকায় চলে এই অভিযান।

মধুখালী সার্কেলের এএসপি ইমরুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সাঁড়াশি অভিযানে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

নতুন কোনো মামলা দেওয়া হয়েছে, নাকি আগে মামলা ছিল— জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পুরাতন মামলা ছিল। সেই মামলায় তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার সাতজন হলেন— কামারগ্রামের মন্টু কাজীর ছেলে মো. আব্দুল্লাহ, একই গ্রামের রহমান শেখের ছেলে হাবিব শেখ, দুলাল মিয়ার ছেলে ফরহাদ মিয়া, নুরু ইসলামের ছেলে সম্রাট শেখ, ওহিদুজজামান মিলনের ছেলে রহমাত শেখ, মো. নুরুল ইসলাম শেখ ছেলে মামুন শেখ এবং ওবায়দুর রহমানের ছেলে শিমুল রহমান। গ্রেপ্তার সবাই ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

এর আগে সোমবার বিকেলে কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমির মাঠের পাশের একটি দোকানে যুবদলের দুই নেতা শাহেদ ও ঐশিককে মব সৃষ্টি করে লাঞ্ছিত করা হয়। শাহেদ কামারগ্রাম ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি এবং ঐশিক গোপালপুর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য। যুবদলের দুই নেতাকে লাঞ্চিতের ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে আলফাডাঙ্গা থানায় অভিযোগ দেন তারা। এরপরেই ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইনামুল হাসানের নেতৃত্বে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য তারিকুল ইসলাম মেম্বার ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী কাউসার হোসেন টিটো এবং ইনামুল হাসানের ভাই মাহবুবসহ শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেন। এ সময় তারা বলতে থাকে— আলফাডাঙ্গা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এখানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কাউকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হেলমেট পরিহিত ছিল এবং তাদের সকলের হাতে রামদা, হকিস্টিক, লোহার রড, ট্যাটা ছিল। এই ঘটনার একটি দৃশ্য কেউ মোবাইল ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দিলে তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়। পরবর্তীতে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিকের ভিডিও নজরে আসে। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘যারা সশস্ত্র মহড়া দিয়ে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ এরপরেই রাতে অভিযান শুরু হয়। সেই অভিযানে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে প্রধান অভিযুক্তরা গা ঢাকা দেওয়ায় পুলিশ এখনও তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজালাল আলম বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি। যারা ওই সশস্ত্র মহড়ায় অংশ নিয়েছিল তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হবে।’

থানা সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফরিদপুর জেলার সাবেক সহ-সভাপতি ইনামুল হাসান। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও নাশকতার অভিযোগে মামলা আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নৌকা প্রতীকে আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ইনামুল। তবে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়; যা প্রায় দেড়বছর বহাল ছিল।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করলেও ইনামুল হাসান স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল খানের কাছে পরাজিত হন। এনামুল হাসানের বাড়ি গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রামে। তার বাবার নাম কুদ্দুস মোল্লা। তিনিও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার ভাই মাহবুব ঢাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ভাটারা থানায় হওয়া একটি হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ৯৭ নম্বর আসামি। আদালতের নির্দেশে ১২ মার্চ ভাটারা থানায় হওয়া মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট দুপুরে ভাটারা থানাধীন যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে নিহতের ভাই জামিল আহম্মেদ মামলা করেন।

একই অভিযোগে মামলা রয়েছে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা তারিকুল ইসলাম মেম্বারের বিরুদ্ধে। তাছাড়া তারিকুলের বিরুদ্ধে আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুরেও মামলা আছে। ভাটারা থানার হত্যা মামলায় ৯৬ নম্বর আসামি এই তারিকুল।

স্থানীয় সূত্র বলছে, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান ও ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার অন্যতম সহযোগী এই এনামুল হাসান। রহমান ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এলাকায় নানান অপকর্মে জড়িত ছিলেন তিনি। অন্যের জমি দখল, নারী কেলেঙ্কারি, টিআর-কাবিখার টাকা আত্মসাৎ, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, বাড়িতে হামলাসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় বাজারগুলো থেকেও মাসিক মাসোহারা আদায় করতেন এই এনামুল হাসান। এছাড়া আছাদুজ্জামান মিয়ার ক্যাডার হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

গ্রেপ্তার

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর