Logo

সারাদেশ

তেঁতুলিয়া নদী ভাঙনে নিঃস্ব শত শত পরিবার, সংকটে জীবন-জীবিকা

Icon

চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ১৮:০১

তেঁতুলিয়া নদী ভাঙনে নিঃস্ব শত শত পরিবার, সংকটে জীবন-জীবিকা

তেঁতুলিয়া নদী ভাঙনে নিঃস্ব শত শত পরিবার, সংকটে জীবন-জীবিকা। ছবি : বাংলাদেশের খবর

ভোলার দক্ষিণাঞ্চলের চরফ্যাসন উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে নীলকমল ইউনিয়নের শত শত ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এ নদী ঘেঁষে থাকা নীলকমল, নুরাবাদ ও মুজিবনগর ইউনিয়নের তীরবর্তী মানুষদের জীবন-জীবিকা আজ ভয়াবহ সংকটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নীলকমল ইউনিয়নের ১ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের বসতবাড়ি ও চাষাবাদকৃত জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে ১ হাজার একর ফসলি জমি। ভিটে বাড়ি ও কৃষিজমি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ২০০ পরিবার।

বাঁধের ঢাল ও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ভিটে বাড়ি হারা পরিবারগুলো। কেউ আবার কোথাও আশ্রয় না পেয়ে নদীর পাড়ে অস্থায়ী ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। অনেক পরিবার একাধিকবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, নীলকমল ইউনিয়নের দু’টি ওয়ার্ডে প্রায় দুই শত পরিবারের আবাসস্থল ছিল তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে। বিগত কয়েক মাস ধরে তীব্র ভাঙনে মানুষের বসতবাড়ি ও আবাদকৃত জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখানে বেশির ভাগ অসহায় জেলে ও প্রান্তিক কৃষক পরিবারগুলো কোনোভাবে একটি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করেন। 

নীলকমল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আ. রহিম জানান, এ নদীর পারে পরিবার নিয়ে দীর্ঘ ৫০ বছর বসবাস করেছেন। এখন বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব। কোথায় যাবে, এমন কোনো আশ্রয়ের জায়গা নেই তাদের। শুধু ঘরবাড়ি হারাননি, যে জমিতে শস্য উৎপাদন করেছেন, তাও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি ও চাষযোগ্য জমি হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আশি বছরের বৃদ্ধ জয়নাল আবেদিন জানান, ২ একর জমি বন্দোবস্ত সূত্রে মালিক হয়ে পরিবার নিয়ে বসতি গড়েছেন তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে। গত কয়েক বছরে তেঁতুলিয়ার ভাঙনে ভিটেবাড়ি, কৃষিজমি হারিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসতি গড়েছেন বেড়িবাঁধের ঢালে। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তার পরিবার।

কৃষক আ. মতিন জানান, তেঁতুলিয়া নদীর তীরঘেঁষা তার ১২ একর জমি ছিল। ৫ একর জমি লগ্নি করে বাকি জমিতে তিনি বিভিন্ন ফসল চাষ করতেন। জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে সংসারের আয় যোগাতেন তিনি। তবে তীব্র ভাঙনের কারণে ১২ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

জেলে সামসুদ্দিন জানান, পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন এ নদীর তীরে বসবাস করতেন। ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার পরিবারে ৫ জন সদস্য রয়েছেন। নদীতে মাছ শিকার করে চালাতেন সংসার। তেঁতুলিয়া নদীভাঙনের ফলে বসতভিটা হারিয়েছেন তিনি। তার কোনো সম্পদ না থাকার কারণে বেড়ির ঢালে একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সরকারের কাছে মাথা গোঁজার ঠাঁই চান তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আলম জানান, তেঁতুলিয়া নদীভাঙন এখানকার মানুষের জন্য একটি দুঃস্বপ্নের নাম। এ প্রকট নদীভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ ভাঙন রোধ করা গেলে তেঁতুলিয়া নদীর তীরের মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। মানুষের মুখে আবারও ফুটবে আশার আলো।

পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা জানান, তেঁতুলিয়া নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ আসলেই কাজ শুরু করব।

এম ফাহিম/এমবি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর