রাজনীতি নিষিদ্ধ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি, হুঁশিয়ারি প্রশাসনের

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ২০:২০

রাজনীতি নিষিদ্ধ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি, হুঁশিয়ারি প্রশাসনের
প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই রাজনীতি নিষিদ্ধ সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি গঠন করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
১২ সদস্যের এ কমিটির সভাপতি হয়েছেন আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. নির্জন। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে একই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আসাদুর রহমান বিজয়কে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হওয়ার সময় ছাত্রদের অঙ্গীকারনামার প্রথম শর্তেই লেখা থাকে, ‘ছাত্র অবস্থায় আমি কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হবো না।’ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিতিতেও ক্যাম্পাসকে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া গত ১৯ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়, ক্যাম্পাসে অধ্যয়নরত সব শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের দলীয় রাজনীতি থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও লোগো দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার নিষিদ্ধ। এর ব্যত্যয় ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বুধবার (১১ জুন) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. আবু হোরায়রা ও সাধারণ সম্পাদক এম. রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দুর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি হয়েছেন মো. মামুন হোসেন খান। সহসভাপতি হয়েছেন আব্দুল্লাহ আল রাফি ও মো. রাকিবুল হাসান।
সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মো. আব্দুল্লাহ আল রাইভার। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে চারজনকে। তারা হলেন- মো. আকরাম হোসেন, মাশরুর মাহমুদ, মেহেদী হাসান ও রওনক জাহান রওনক।
সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে সবুজ আহমদকে ও দপ্তর সম্পাদক করা হয়েছে উল্লাস কুমার দত্ত আকাশকে।
কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আগামী এক বছরের জন্য ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল’-এর আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হলো। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৯৯৮ সালে গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ। সুস্থ ধারার রাজনীতির লক্ষ্যে ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও ক্যাম্পাসে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ক্যারিয়ার ক্লাব, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, ডিবেটিং সোসাইটি, অগ্নিসেতুসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। তবে কখনও কোনো দলীয় রাজনৈতিক সংগঠন প্রকাশ্যে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করেনি। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগেরও এখানে কোনো কমিটি বা কার্যক্রম দেখা যায়নি।
শিক্ষার্থীরা জানান, বামপন্থী কিছু সংগঠন ও ইসলামী ছাত্রশিবির বিভিন্ন মোড়কে মাঝে মাঝে সক্রিয় থাকলেও তাদের প্রকাশ্যে কোনো কমিটি বা সংগঠিত কার্যক্রম দেখা যায়নি।
তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত এ রাজনীতি-নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে সক্রিয় হতে শুরু করে ছাত্রদল। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও লোগো ব্যবহার করে বাইরে নানা প্রচারমূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করে।
সবশেষে প্রায় তিন দশকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল তাদের কমিটি ঘোষণা করল।
এ বিষয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. নির্জন বলেন, সম্প্রতি যে ১২ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট সদস্যদের সম্মতিতে গঠিত হয়েছে। গণ বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাজনীতি-মুক্ত ক্যাম্পাস, এ ধারণা মাথায় রেখেই আমরা এখানে ভর্তি হয়েছি। আমরা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোনো দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করি না। আমাদের পাশাপাশি আরও অনেক সংগঠন নানা ধরনের কাজ করছে। তাহলে শুধু আমাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সেটি বৈষম্যমূলক মনে হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেব। এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। তবে প্রশাসন অনেক সময় আগ্রহ দেখায় না। তাই বলে কি আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার থাকবে না?
‘যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়। তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’, যোগ করেন তিনি।
এদিকে রাজনীতি নিষিদ্ধ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি গঠনের ঘোষণায় উষ্মা প্রকাশ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাসঙ্গিক নীতিমালায় ও প্রসপেক্টাসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনরায় একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে—‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কিংবা বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে কোনো দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।’
উপাচার্য আরও বলেন, নোটিশ প্রদানের পরও যদি কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি রাজনৈতিক কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে, তাহলে তা স্পষ্টভাবে নীতিমালার লঙ্ঘন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আরিফুল ইসলাম সাব্বির/এমবি