বাগেরহাটের ২ গবেষক বানালেন ‘ইন্টারেক্টিভ কিয়স্ক’, স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য

বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ০৯:৫২

বাংলাদেশের দুই তরুণ গবেষকের উদ্ভাবিত ‘ইন্টারেক্টিভ কিয়স্ক ফর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট’ প্রযুক্তি পেয়েছে যুক্তরাজ্যের পেটেন্ট স্বীকৃতি।
বাংলাদেশের দুই তরুণ গবেষকের উদ্ভাবিত ‘ইন্টারেক্টিভ কিয়স্ক ফর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট’ প্রযুক্তি পেয়েছে যুক্তরাজ্যের পেটেন্ট স্বীকৃতি।
উদ্ভাবকদ্বয় হলেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের ইসমত জেরিন ও ফেনীর সোনাগাজীর পূর্ব মহেশচর গ্রামের মুহাম্মদ মইনুল ইসলাম। ইসমত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টক্লিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন ও মইনুল পড়ছেন ট্রায়ান ইউনিভার্সিটিতে।
তাদের উদ্ভাবিত ‘ইন্টারেক্টিভ কিয়স্ক’ একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল ডিভাইস। যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্বয়ংক্রিয় পরিষেবা দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এ কিয়স্ক বা স্বয়ংক্রিয় পরিষেবা যন্ত্র তথ্য সংগ্রহ, লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ, গ্রাহক যোগাযোগসহ নানা ধরনের কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম। স্বয়ংক্রিয় এ কিয়স্কের সাহায্যে শ্রম খরচ কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে এর ফলে বাড়বে ব্যবসার পরিষেবার গতি।
এ গ্যাজেটটি দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে সক্ষম। এর মাধ্যমে খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র, কর্পোরেট অফিস কিংবা সেবা কেন্দ্রে স্থাপন করে গ্রাহকদের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রক্ষা করা যাবে।
শপিং মল বা স্টোরে প্রবেশ করার পর ক্রেতারা এ গ্যাজেটের সাহায্যে সহজেই পণ্যের তালিকা, মূল্য ও সুপারশপে পণ্যটি কোথায় রয়েছে তা দেখতে পারেন। দোকানের কর্মচারীদের কাছে গিয়ে বারবার জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে ডিভাইস থেকে এক ক্লিকেই সব তথ্য পাওয়া যাবে।
কিয়স্কের মাধ্যমে গ্রাহকরা পছন্দের পণ্য নির্বাচন করে সরাসরি অনলাইনে পেমেন্টও করতে পারবেন। এ পদ্ধতিতে তাদের সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি লেনদেনেও স্বচ্ছতা তৈরি হবে। ডিসকাউন্ট বা বিশেষ অফারের তথ্যও একই জায়গায় পাওয়া যাবে। এছাড়া কোনো পণ্যের বিষয়ে বাড়তি তথ্য প্রয়োজন হলে গ্যাজেটটির ‘প্রশ্ন জিজ্ঞাসা’ অপশনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক উত্তর পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে, বিক্রেতাদের জন্য ‘ইন্টারেক্টিভ কিয়স্ক’ একটি অত্যাধুনিক ব্যবসায়িক সমাধান। কর্মচারীর সংখ্যা কম থাকলেও কিয়স্কের মাধ্যমে গ্রাহকরা নিজেরাই প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরিষেবা পেয়ে যাবেন। ফলে কর্মীদের চাপ অনেকটাই কমে যাবে। কিয়স্কের পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে ক্রেতারা সরাসরি বিল পরিশোধ করতে পারবেন। এতে লেনদেনের স্বচ্ছতা বাড়বে ও নগদ অর্থ ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি কমবে। নতুন পণ্য বা বিশেষ অফার প্রচারণা করা যাবে কিয়স্কে।
এছাড়া কিয়স্কের ডেটা বিশ্লেষণ করে বিক্রেতারা জানতে পারবেন কোন পণ্যের চাহিদা বেশি কিংবা কোন সময়ে বিক্রি বেড়ে যায়। অর্থাৎ বিক্রয় সহযোগী গ্যাজেট দিয়েই বিক্রেতা দোকানের পণ্য ও ক্রেতার মনোভবের ওপর গবেষণা করে সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে ব্যবসাকে আরও বড় করতে পারবেন।
যুক্তরাজ্যের ডিজাইন নম্বর ৬৪৩৯৭৬৬-এর অধীনে গবেষক ইসমত জেরিন ও মুহাম্মদ মইনুল ইসলামের এ উদ্ভাবনটি নিবন্ধিত হয়েছে। এর ফলে কোনো তৃতীয় পক্ষ এটি নকল করতে পারবে না। পেটেন্টপ্রাপ্তির মাধ্যমে গবেষকদ্বয় কেবল নিজেদের উদ্ভাবনী প্রতিভাই প্রদর্শন করেননি, বরং বাংলাদেশের গর্বও বাড়িয়েছেন।
বিজনেস কিয়স্ক তৈরির বিষয়ে গবেষক ইসমত জেরিন বলেন, দেশের বাইরে আসার পর দেখেছি, বড় দোকানগুলো পণ্য ব্যবস্থাপনায় বেশ কাঁচা। ফলে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করতে হয়। এতে খরচ বাড়ে। এছাড়া সুপারশপের কোন সিরিজের পণ্য বেশি সতেজ। কোন সিরিজের পণ্য অপেক্ষাকৃত কম দামে পাওয়া যায়। এগুলো খুঁজতে অনেক সময় ব্যয় করেন ক্রেতারা। ফলে এ কিয়স্ক তৈরির আইডিয়াটি আমার মাথায় আসে। এর মাধ্যমে বিক্রেতা ও ক্রেতা—দুজনেরই সময় বাঁচবে। ক্রেতা সহজেই তার পণ্য সুলভ মূল্যে পাবেন। আবার বিক্রেতাও খুব সহজেই কম কর্মী নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সুপারশপ বাড়ছে। কর্পোরেট হাউজগুলোতে প্রতিনিয়ত কাস্টমার বাড়ছে। সুতরাং এ প্রযুক্তি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও লাভজনক হবে।
অপর গবেষক মুহাম্মদ মইনুল ইসলাম বলেন, এ উদ্ভাবন বিশ্বব্যাপী নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক হবে। আমাদের এ কিয়স্ক দিয়ে দরকার হলে সম্পূর্ণ কর্মীবিহীন দোকান বা অফিসও তৈরি করা সম্ভব। কারণ গ্রাহকের যা যা তথ্য প্রয়োজন, তা সবই স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া কর্পোরেট সেবাকেন্দ্রগুলোতেও সেবার মান বৃদ্ধি ও কম সময়ে সেবা প্রদান করা সম্ভব।
মূলত ব্যবসায়ে দ্রুত ও সঠিক সেবা দেওয়ার নীতিকে মাথায় রেখেই এ ডিভাইস উদ্ভাবন করা হয়েছে বলে জানান এ দুই তরুণ গবেষক। তারা মনে করেন, এ উদ্ভাবনী ডিভাইসটি আধুনিক ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এ উদ্ভাবন কেবল বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির দৃষ্টান্ত নয়, বরং বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশি গবেষকদের উদ্ভাবনী দক্ষতার প্রমাণও বটে।
শেখ আবু তালেব/এমবি