প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় স্কুলছাত্রী আনজুমকে খুন করেন জুনেল

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ২০:৪৪

ঘাতক জুনেল মিয়া (বামে) ও নাফিসা জান্নাত আনজুম (ডানে) /ছবি : সংগৃহীত
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় আনজুমকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন প্রতিবেশী জুনেল মিয়া (৩৯)।
হত্যার পর মরদেহ ঝোপের মধ্যে ফেলে রাখে ঘাতক। পরে পুলিশ তদন্তে নেমে মো. জুনেলকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালে সিংগুর গ্রামে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয় কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের বাসিন্দা স্কুলছাত্রী আনজুম। নিখোঁজ হওয়ার পরদিন কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার পরিবার।
দুই দিন পর শনিবার (১৪ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টায় আনজুমের ভাই ও মামা বাড়ির পাশের দুর্গন্ধ পেয়ে খোঁজ করতে গিয়ে অর্ধগলিত অবস্থায় ভিকটিমের মরদেহ খুঁজে পান। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠায়।
এ ঘটনায় কুলাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল ও কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. আজমল হোসেন এবং কুলাউড়া থানার ওসি গোলাম দস্তগীরসহ পুলিশের একটি বিশেষ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করে এবং ছয়টি বিশেষ টিম গঠন করে ঘটনার আশপাশের এলাকা তল্লাশি শুরু করে। একপর্যায়ে স্থানীয়দের তথ্য, উদ্ধারকৃত আলামত এবং সন্দেহভাজন হিসেবে জুনেল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার মোবাইল ফোনে পর্নোগ্রাফি ব্রাউজিংয়ের তথ্য এবং নারী সংক্রান্ত আচরণগত প্রমাণ মেলার পর সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।
পরে রোববার রাত ১২টার দিকে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে জুনেল মিয়া হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। জবানবন্দিতে তিনি জানান, আনজুম তার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে নিয়মিত স্কুল ও প্রাইভেট পড়তে যেত। এই সুবাদে মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেছিল জুনেল।
ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার (১২ জুন) আনজুম প্রাইভেট শেষে বাড়ি ফেরার সময় তাকে অনুসরণ করে জুনেল। একপর্যায়ে তার পেছনে গিয়ে জড়িয়ে ধরলে আনজুম চিৎকার শুরু করে। তখন সে মেয়েটির গলা চেপে ধরলে আনজুম অচেতন হয়ে পড়ে যায়। পরে মরদেহ কিরিম শাহ মাজার সংলগ্ন জঙ্গলের পাশের ছড়ার ধারে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
হত্যাকাণ্ডের আলামত হিসেবে আনজুমের স্কুল ব্যাগ, বই, জুতা ও বোরখা ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ভিকটিমের পরিহিত বোরখা মাজার সংলগ্ন এক পারিবারিক কবরস্থানের সীমানার বাইরে ফেলে দিয়েছিল জুনেল। তার দেখানো স্থান থেকে স্থানীয়দের ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বোরখাটি উদ্ধার করা হয়।
ঘটনাটি এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। পুলিশের দাবি, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবেই এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
পুলিশ আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জিয়াউল হক/ওএফ