মুক্তিযুদ্ধে নারী বীরত্বের অনন্য নাম সখিনা বেগম আর নেই

নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১৯:১৮
-68516b2eedfd8.jpg)
মহান মুক্তিযুদ্ধের সাহসী নারী যোদ্ধা সখিনা বেগম। ছবি: সংগৃহীত
কিশোরগঞ্জের নিকলীর গর্ব, মহান মুক্তিযুদ্ধের সাহসী নারী যোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই। বার্ধক্যজনিত কারণে মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর ৫টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহানা মজুমদার মুক্তি বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সখিনা বেগম আজ ভোরে বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়া ইউনিয়নের বড়মাইপাড়া গ্রামে তাঁর ভাগনি ফাইরুন্নেছা আক্তারের বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। বিকেল ৫টায় তাঁকে গুরুই এলাকায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।’
নিকলীর গুরুই ইউনিয়নের বাসিন্দা সখিনা বেগম ছিলেন একজন সাহসী নারী যোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া, তথ্য আদান-প্রদান, রান্নাবান্না ও সেবা প্রদানসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সংস্থা থেকে সম্মাননা পেয়েছেন।
তাঁর ভাগনি ফাইরুন্নেছা আক্তার জানান, ‘সখিনা বেগম নিঃসন্তান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগেই স্বামী কিতাব আলী মারা যান। এরপর তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। পরে আমি তাঁকে বাড়িতে এনে দেখাশোনা করি।’
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘সখিনা বেগম ছিলেন সাহস ও ত্যাগের প্রতীক। তাঁর মতো নারীর গল্প ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা উচিত।’
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নানা গ্রন্থ ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনায় জানা যায়, সখিনা বেগম ‘বসু বাহিনী’র ক্যাম্পে রান্নার দায়িত্ব পালন করতেন এবং গোপনে রাজাকারদের গতিবিধি নজরদারি করে তথ্য পৌঁছে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। একবার তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন, তবে কৌশলে পালিয়ে এসে একটি ধারালো দা নিয়ে রাজাকারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তাঁর হাতে নিকলীর পাঁচ রাজাকার নিহত হন।
বর্তমানে সেই দা সংরক্ষিত আছে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে, যেখানে সখিনা বেগমের নামফলকও স্থাপন করা হয়েছে। তাঁর বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি “বীর মুক্তিযোদ্ধা” উপাধিতে ভূষিত হন।
তাঁর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা মনে করেন, ‘সখিনা বেগম শুধু একজন নারী মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, ছিলেন স্বাধীনতার ইতিহাসে এক অনন্য সাহসিকতার প্রতীক।’
এআরএস