হার্ট অ্যাটাককে ‘হত্যা’ দেখিয়ে ১০ মাস পর মামলা, বেরোবি শিক্ষক কারাগারে
শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ আসামি করা হয়েছে ৫৪ জনকে

বেরোবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ০৯:৪১
-6854d84f60596.jpg)
অধ্যাপক মো. মাহামুদুল হককে গ্রেপ্তার করে হাজিরহাট থানা পুলিশ। ছবি : বাংলাদেশের খবর
রংপুরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া মুদি দোকানদারের মৃত্যুর ১০ মাস পর ‘হত্যা মামলা’ দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহামুদুল হকসহ ৫৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে নগরীর ধাপ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার নিজ বাসা থেকে অধ্যাপক মো. মাহামুদুল হককে গ্রেপ্তার করে হাজিরহাট থানা পুলিশ। পরে তাকে আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার সহধর্মিণী মাসুবা হাসান মুন।
মামলার এজাহারে সবচেয়ে আলোচনার বিষয়—প্রধান আসামি করা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এবং তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।
অভিযোগ রয়েছে, মামলায় অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। নিহত সমেছ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম ও ছেলে আশিকুর রহমান স্বীকার করেছেন, সমেছ উদ্দিন পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ভয়ে দৌড়ে পালানোর সময় হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তারা জানান, মামলায় কী লেখা হয়েছে তা জানেন না, শুধু পুলিশের কথামতো কাগজে সই করেছেন।
তদন্তে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী জুলাই আন্দোলনের সময় জামায়াত নেতা হাজি নাছির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশ এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। এ সময় মুদি দোকানদার সমেছ উদ্দিন ভয়ে দৌড় দেন এবং হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করেন।
তবে মামলা দায়ের করা হয় ২০২৫ সালের ৩ জুন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘সমেছ উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে আসামিরা।’ অথচ মৃত্যুর দিনই তার মরদেহ কোনো ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করা হয়।
এই মামলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মাহামুদুল হকের সহধর্মিণী মাসুবা হাসান মুন তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমার স্বামী নির্দোষ। এটি একটি সাজানো মিথ্যা মামলা। আমরা সবার সহযোগিতা চাই।’
মাহামুদুল হকের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের এই গ্রেপ্তার গভীরভাবে উদ্বেগজনক। দ্রুত তার মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
এদিকে, মামলার বাদী আমেনা বেগম জানিয়েছেন, ‘আমি পুলিশ অফিসে গিয়েছিলাম, ওরা যা বলেছে তাই কাগজে সই করেছি। মামলায় কার নাম আছে তা আমি জানি না।’
নিহতের ছেলে আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমার বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। তখন পুলিশ ছিল, তাড়ায়নি, তবে উপস্থিত ছিল।’
স্থানীয় জামায়াত নেতা হাজি নাছির উদ্দিন বলেন, “পুলিশ আমাকে ধরতে এসেছিল, সমেছ উদ্দিনকে নয়। তিনি আতঙ্কে মারা যান।”
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, “হার্ট অ্যাটাককে ‘হত্যা’ বানিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও নিরীহ মানুষদের আসামি করা হয়েছে। উদ্দেশ্য রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করা।”
অন্যদিকে হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহ মামলার বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি কেবল বলেন, ‘উপরমহলের সঙ্গে কথা বলুন।’
এমএইচএস