Logo

সারাদেশ

মৃত্যুর প্রহর গুনছে ক্যান্সার আক্রান্ত ১২ বছরের তাসলিমা

Icon

বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ১৮:১৫

মৃত্যুর প্রহর গুনছে ক্যান্সার আক্রান্ত ১২ বছরের তাসলিমা

ক্যান্সার আক্রান্ত তাসলিমা আক্তার /ছবি : বাংলাদেশের খবর

‘আমাকে বাঁচতে দিন, আমি বাঁচতে চাই। আমি অনেক কষ্ট পাচ্ছি।’ এভাবেই নিজের জীবন ভিক্ষা চেয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায় ১২ বছর বয়সী তাসলিমা আক্তার। একমাত্র সন্তানের বাঁচার আকুতি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা-মা।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দূর্গাহাটা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বেতুয়াকান্দি গ্রামের দরিদ্র পিতার ১২ বছর বয়সী তাসলিমার চোখে এখনো অনেক স্বপ্ন। লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিল সে। অথচ সেই স্বপ্ন আজ এক নির্মম বাস্তবতায় থমকে গেছে। কারণ, তাসলিমা এখন ক্যান্সার নামক মরণ রোগে আক্রান্ত।

ছয় মাস আগে তার বাম পায়ের হাড়ে বোন ক্যান্সার ধরা পড়ে। সম্পূর্ণ সুস্থতার জন্য জরুরি অপারেশন করতে প্রয়োজন প্রায় ২০ লাখ টাকা। যে বয়সে তাসলিমার বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সেই সে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে প্রতিনিয়ত।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে আছে তাসলিমা। একা দাঁড়াতে বা বসতে পারে না, সবকিছুতেই অন্যের সাহায্য নিতে হয়। হাত তুলে আল্লাহর কাছে নিজের জীবন ভিক্ষা চাইছে সে। দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। ব্যথায় কাঁদতে কাঁদতে চোখেও ঝাপসা দেখে। বাম পা ফুলে গেছে। একমাত্র মেয়ের এমন যন্ত্রণায় কাঁদছেন মা শাজিনা আক্তার। মেয়ের চিকিৎসার জন্য বাড়ির ভিটা ছাড়া সব জমি, গরু, আসবাব বিক্রি করেছেন বাবা তাজুল ইসলাম।

তাসলিমার ভাই শাখিন আহম্মেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গত জানুয়ারিতে আমার বোনটি পায়ের ব্যথায় চিৎকার করতে থাকে। প্রথমে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাই। পরীক্ষায় জানা যায়, তার বাম পায়ের হাড়ে ক্যান্সার হয়েছে। এরপর থেকেই চিকিৎসা শুরু হয়। ডাক্তার প্রথমে চারটি কেমোথেরাপি দিতে বলেন।

বগুড়ায় শিশুদের জন্য ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ না থাকায় সিরাজগঞ্জ খাঁজা ইউনুছ আলী হাসপাতালে শুরু হয় তার চিকিৎসা। প্রতিটি কেমোথেরাপির জন্য খরচ হয় ৫০-৬০ হাজার টাকা। 

শাখিন বলেন, এভাবে তিনটি কেমো দিতে বাবা বাড়ির জায়গা ছাড়া সব কিছুই বিক্রি করে দিয়েছেন। ধারদেনা ও মানুষের সহযোগিতায় যা পেয়েছি, তাও শেষ। এখন যদি কেউ পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে আমার একমাত্র ছোট বোন। বোনের চিকিৎসার খরচ করতে গিয়ে আমার লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে।

তাসলিমা আক্তার ও তার পরিবার /ছবি : বাংলাদেশের খবর

দিন যত যাচ্ছে, ততই অসুস্থ হয়ে পড়ছে তাসলিমা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দ্রুত অপারেশন ও কেমোথেরাপি না দিলে তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়।

তাসলিমার চাচা চাঁন মিয়া বলেন, তার অপারেশন ও কেমোথেরাপিতে প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। আমার ছোট ভাই তার মেয়ের চিকিৎসার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। বাড়ি ছাড়া সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছে। এখন অন্যের জমিতে কাজ করে কোনো মতে বেঁচে আছে। কিন্তু চিকিৎসার খরচ চালানো আর সম্ভব নয়। দরিদ্র এই পরিবার এখন তাকিয়ে আছে সমাজের সহৃদয় মানুষের দিকে।

স্থানীয় প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম বলেন, তাসলিমার চিকিৎসার জন্য আমরা গ্রাম এবং এবারের ঈদে ঈদগাহ মাঠ থেকে সবাই মিলে কিছু টাকা দিয়েছিলাম। সেটাও শেষ। আমি মানবিক মানুষদের প্রতি আকুল আবেদন করছি— একটু সহায়তা দিন, তাসলিমার জীবন বাঁচান।

তাসলিমার মা শাজিনা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার একটামাত্র মেয়ে। তার এমন কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না। পড়ালেখায় সে ভীষণ আগ্রহী ছিল, তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ডাক্তার হবে। এখন সেই স্বপ্ন ঝরে পড়ছে।

তাসলিমা গাবতলী দুর্গাহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে।

গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে আবেদন এলে যাচাই-বাছাই করে বিধিমোতাবেক তাদের পাশে দাঁড়াব।

সহযোগিতা করতে চাইলে
তাসলিমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে এই নম্বরে- ০১৭৯১৭৩৬৬০৫ (বিকাশ/নগদ)। এ ছাড়া যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সাহায্য পাঠানো যাবে সেটি হলো- সোনালী ব্যাংক, গাবতলী শাখা, অ্যাকাউন্ট নম্বর- ০৬১৩০০১০৩৫৭২৭।

জুয়েল হাসান/ওএফ/ 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর