গাজীপুরের শ্রীপুরে বিএনপির এক পথসভায় ‘মুজিবীয়’ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো ছাত্রদল নেতা নাহিদ হাসানকে ঘিরে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ৭ সেকেন্ডের ভিডিও এবং দুটি পোস্টার ঘিরে এ বিতর্ক চরমে পৌঁছেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, নাহিদ হাসান বলেন, ‘প্রহলাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে মুজিবীয় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।’ কথাটি বলার পরই তার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

শুক্রবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টারে দেখা যায়, গাজীপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজের ছবিসহ নাহিদ হাসানের একটি পোস্টার ঘুরছে। একই রকম আরেকটি পোস্টারও ঘুরছে, যেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের বিভিন্ন নেতার ছবি রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর নানা কৌশলে ছাত্রলীগে থেকেই উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন নাহিদ। এরপর থেকেই বিএনপির পথসভায় ‘মুজিবীয়’ শুভেচ্ছা জানানো সেই ছাত্রলীগ নেতা এখন ছাত্রদল সভাপতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এ ঘটনার পর থেকেই ওই ইউনিয়ন ছাত্রদল কমিটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি পোস্টার ভাইরাল হয়েছে, যেখানে ছাত্রলীগ আমলে ও ছাত্রদলের আমলে দুই ব্যানারে পোস্টারটি সাঁটানো হয়েছিল।

‘মুজিবীয়’ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপির পথসভায় বক্তব্য দেওয়া ছাত্রদল নেতার নাম নাহিদ হাসান। তিনি উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি।

তবে বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, চার থেকে পাঁচ মাস আগে প্রহলাদপুর এলাকার লোহাগাছিয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত একটি পথসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় ভুলবশত ওই কথা বলে ফেলেন নাহিদ হাসান। এ নিয়ে তখনই বেশ সমালোচনা হয়েছিল বলে জানান ছাত্রদলের কর্মীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ইউনিয়ন ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলার সব ইউনিয়নের কমিটি ঘোষণার অনেক পরে শুধু প্রহলাদপুর ইউনিয়নের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল, যা নিয়েও বিতর্ক ছিল। এদিকে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব আমিনুল সরকারের একক সিদ্ধান্তে ও জেলা ছাত্রদল সভাপতির সুপারিশে নাহিদ হাসানকে সভাপতি করা হয়।

ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে তাকে এ পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এলাকায় এখনও ছাত্রলীগ আমলের তার বহু পোস্টার ও ফেস্টুন টাঙানো রয়েছে। তবুও তাকেই সভাপতি করা হয়েছে—এ নিয়ে ইউনিয়ন ছাত্রদলের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পোস্টারগুলো ঘিরেও বিতর্ক বাড়ছে। অনেকে মনে করছেন, এটি এডিট করা পোস্টার হতে পারে। বিষয়টি যাচাই করা হবে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

প্রহলাদপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জনি সিকদার বলেন, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে আমাদের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের আমলে নাহিদসহ আমরা ছাত্রদলের কর্মীদের নিয়ে রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। ছাত্রদলের দুর্দিনে নাহিদের অবদান অনেক। নাহিদ বহু কষ্ট করে ছাত্রদলের কর্মীদের ধরে রেখেছে, তাদের পাশে থেকেছে। তবে সে যে ছাত্রলীগ করত, এমনটি সে কখনো স্বীকার করেনি।

এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জিয়াউল করিম রিফাত মোড়ল বলেন, ‘চার-পাঁচ মাস আগে প্রহলাদপুর এলাকায় একটি পথসভায় ওই বক্তব্যটি দিয়েছিল নাহিদ। ইতিমধ্যে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

সোহেল/এমবি