Logo

সারাদেশ

‘জাতীয় পরিবেশ পদক’ পাচ্ছেন পঞ্চগড়ের মামুন

Icon

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ০৮:৩৯

‘জাতীয় পরিবেশ পদক’ পাচ্ছেন পঞ্চগড়ের মামুন

পরিবেশ ও শিক্ষাকর্মী মাহমুদুল ইসলাম মামুন | ছবি : বাংলাদেশের খবর

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ দিনেই দেশের পরিবেশ রক্ষা ও সচেতনতা কার্যক্রমে ব্যতিক্রমী অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘জাতীয় পরিবেশ পদক-২০২৪’ পাচ্ছেন পঞ্চগড়ের পরিবেশ ও শিক্ষাকর্মী মাহমুদুল ইসলাম মামুন। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের মাঝে গাছের চারা বিলি, বই উপহার, প্লাস্টিক ও পলিথিন কুড়িয়ে পরিবেশ রক্ষার কাজে নিয়োজিত এ তরুণ আজ জেলার গর্বে পরিণত হয়েছেন।

মাস্টার্স পাশ করেও চাকরির পেছনে না ছুটে মামুন বেছে নিয়েছেন প্রকৃতি আর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পথ। হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষের আয় থেকে গাছের চারা ও বই কিনে সকাল হতেই সাইকেলে করে ছুটে চলেন এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। সঙ্গে থাকে পরিবেশ সচেতনতামূলক প্ল্যাকার্ড, গাছের চারা ও বই।

রাস্তার পাশে গর্ত দেখলে নিজের হাতে ভরাট করে দেন, ঝোপঝাড় পরিস্কার করেন। বাজারে পড়ে থাকা পলিথিন, মাছ-মাংসের উচ্ছিষ্ট বা প্লাস্টিক কুড়িয়ে রাখেন নির্ধারিত জায়গায়। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে নীরবে কাজ করে গেছেন পরিবেশ রক্ষায়।

২০১৩ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক গাছের চারা বিলি করেছেন মামুন। মহামারিকালেও ঘরে বসে থাকেননি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিয়েছেন ফলজ, ভেষজ ও ঔষধি গাছ, সঙ্গে সচেতনতার বার্তা। শুধু গাছ বিলি নয়, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে মামুন গড়ে তুলেছেন ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারও। একটি বই পড়া শেষ হলে আরেকটি দিয়ে বদলে দেন। বই পড়া শেষে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় গাছের চারা। শিশুরা যেন প্রকৃতিকে ভালোবাসে, সে লক্ষ্যে খোলা আকাশের নিচে আয়োজন করেন পাঠের আসর—‘আকাশতলা পাঠশালা’। যেখানে শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি বয়োজ্যেষ্ঠরাও অংশ নেন।

এ ছাড়া নিজ গ্রামে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ‘প্রকৃতি পাঠাগার’। মাটির তৈরি তাক, গোল ছাউনি ঘরে গড়া এ পাঠাগারে প্রতিদিন ছুটে আসে বিভিন্ন বয়সী পাঠক।

মাহমুদুল ইসলাম মামুন জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলাধীন আজিজনগর গ্রামের আজহারুল-মাহমুদা দম্পতির ছেলে। রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাস করার পর থেকেই তিনি জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, ‘মানুষ আর প্রকৃতির জন্য কিছু করতে হবে’।

জাতীয় পর্যায়ে মামুনের এ পদকপ্রাপ্তির খবরে জেলাব্যাপী বইছে আনন্দের হাওয়া। অনেকেই বলছেন, নিঃস্বার্থ এই পরিবেশ যোদ্ধার হাতে পদক তুলে দেওয়া মানেই প্রকৃতি ও মানবিক মূল্যবোধকে সম্মান জানানো।

মামুন বলেন, ‘পরিবেশ নিয়েই বাঁচতে চাই, মরতেও চাই। গাছ নেই তো অক্সিজেন নেই। পরিবেশ না থাকলে আমরাও থাকব না। আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃতিকে ভালোবাসা মানে নিজের অস্তিত্বকে ভালোবাসা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার আমাকে যে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তাতে আমি খুব কৃতজ্ঞ। এই পদক আমি আমার মা’কে উৎসর্গ করছি। মা না থাকলে হয়তো এতটা পথ আসা হতো না।’

তার মা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘ছেলেটা ছোট থেকেই গাছ-প্রকৃতি ভালোবাসে। আজ সরকার তার কাজকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, এতে আমি একজন মা হিসেবে গর্বিত।’

পরিবেশ অধিদপ্তর, পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘মামুন একজন প্রকৃত পরিবেশবন্ধু। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করেছি। অবশেষে তার কাজ স্বীকৃতি পেয়েছে, আমরা গর্বিত।’

  • এসকে দোয়েল/এটিআর
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর