
পঞ্চগড় সীমান্তে ১৮ জনকে পুশইন করল বিএসএফ। ছবি : বাংলাদেশের খবর
পঞ্চগড়ের তিনটি সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১৮ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বুধবার (২৫ জুন) ভোরে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার শুকানী, সদর উপজেলার টোকাপাড়া ও জয়ধরভাঙা সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। পরে বিজিবি টহল দলের সদস্যরা তিনটি স্থান থেকেই তাদের আটক করে।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নীলফামারী ৫৬ বিজিবির আওতাধীন শুকানী সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিএসএফের ৪৬ ব্যাটালিয়নের ট্যাপরাভিটা ক্যাম্পের সদস্যরা মেইন পিলার ৭৪১-এর ৪ নম্বর সাব পিলার এলাকা দিয়ে নারী-শিশুসহ ৫ জনকে পুশইন করে। পরে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভজনপুর বিওপির টহল দল দেবনগর ইউনিয়নের ধানশুকা এলাকা থেকে তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলেন- নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাধবপাশা বিষ্ণুপুর এলাকার মৃত খোকা গাজির ছেলে মনির গাজি (৩২), তার স্ত্রী সালেহা বেগম (২৫), মেয়ে নাজিয়া (৮), নাফিজা (৪) ও রাবেয়া (২)।
প্রায় একই সময়ে সদর উপজেলার টোকাপাড়া সীমান্তের মেইন পিলার ৭৪৫-এর ৩ ও ৪ নম্বর সাব পিলার এলাকা দিয়ে নারী-শিশুসহ আরও ৬ জনকে বিএসএফ পুশইন করলে কমলাপাড়া এলাকা থেকে তাদের আটক করে টোকাপাড়া বিজিবি বিওপির টহল দল।
আটককৃতরা হলেন- নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর এলাকার রউফ ফকিরের ছেলে রাজিব ফকির (২৩), তার বোন রেশমা বেগম (২২) ও তার মেয়ে ফাতেমা ফকির (১)। একই এলাকার দুলাল মোল্লার ছেলে আকছেদ মোল্লা (৩০), তার চার মাস বয়সী ছেলে হাসিবুল মোল্লা ও রূপল শেখের মেয়ে জামেলা খাতুন (১৯)।
অন্যদিকে সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের জয়ধরভাঙা সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫৮-এর ৯ নম্বর সাব পিলার এলাকা দিয়ে বিএসএফের একই ব্যাটালিয়নের শ্যাম বিওপির সদস্যরা আরও ৭ জনকে পুশইন করে। পরে জয়ধরভাঙা বিওপির বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলেন- নড়াইলের কালিয়া উপজেলার হাড়িডাঙ্গা এলাকার আবুল কালামের ছেলে আবেদ শেখ (৪০), মাধবপাশা গ্রামের সামাদ মেখের ছেলে নুরুল শেখ (৭০), তার ছেলে জাকারিয়া শেখ (২২), টুটুল শেখের স্ত্রী পারভীন, মেয়ে শারমিন (৯), নাজমিন (৬) ও ছেলে ঈশা শেখ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আটককৃতরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রমিক ও দিনমজুরের কাজ করতেন। পরে ভারতীয় পুলিশ তাদের আটক করে শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরে পাঠায়। সেখান থেকে বিএসএফ তাদের তিনটি পৃথক সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করে।
আটককৃতদের তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড় সদর থানার হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুসা মিয়া বলেন, ওখানে বিওপি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করা পাঁচজনকে ভজনপুর বিওপির সদস্যরা আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদের আইন অনুযায়ী পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
পঞ্চগড় সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, পঞ্চগড় সদর উপজেলার দুই সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে পুশইন করা হলে তাদের আটক করে বিজিবি। পরে আটককৃতদের আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আমরা আইন অনুযায়ী তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা জানান, আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা দিয়ে ১৩ জনকে পুশইন করেছে। আর ১৮ বিজিবি ৫ জনকে আটক করে। আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করার মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। পুলিশ তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করবে।
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনিরুল ইসলাম বলেন, নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের শুকানী ক্যাম্প এলাকা দিয়ে পাঁচজন বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করার পরে দেবনগর ইউনিয়নের ধানশুকা এলাকায় আমাদের ভজনপুর বিওপির টহল দল তাদের আটক করে। আমরা তেঁতুলিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তাদের হস্তান্তর করেছি।
এসকে দোয়েল/এমবি