‘অভ্যন্তরীণ মিটিংয়ে’ সহকর্মীর বুকে লাথির অভিযোগ, আইসিইউতে এনসিপি নেতা

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১৯:১৫
আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫, ২১:০৮
-(70)-685d47f7dee27.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অভ্যন্তরীণ বৈঠকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সহকর্মীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে এক যুগ্ম সমন্বয়ক প্রকাশ্যে আরেক নেতার বুকে লাথি মারার অভিযোগ উঠেছে। এতে আহত ওই নেতা বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার (২৫ জুন) রাতে রাজশাহীর তেরখাদিয়ার একটি কফিশপে জেলার প্রধান সমন্বয়ক ও যুগ্ম সমন্বয়কদের নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সাংগঠনিক নানা বিষয়ে আলোচনা চলাকালে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট একটি ইস্যু নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। উত্তেজনার একপর্যায়ে যুগ্ম সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলাম সাজু উঠে দাঁড়িয়ে যুগ্ম সমন্বয়ক ফিরোজ আলমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং এর ফাঁকে সবার সামনে গিয়ে তার বুকে আঘাত করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য।
বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ততক্ষণে ঘোলাটে পরিস্থিতিতে রূপ নেয়। ফিরোজ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার কিছু সময় পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে যান এবং বাড়ির সামনে গিয়ে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যান। তার স্ত্রী দৌড়ে এসে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘বুকে প্রচণ্ড ব্যথা। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাও।’
পরে তার স্ত্রী তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউতে ভর্তি করান।
ফিরোজের স্ত্রী সাথী বলেন, ‘তিনি বাসায় এসে বলেন, বুকে খুব ব্যথা করছে। কিছু বলেননি, শুধু বলেন হাসপাতালে নিয়ে যেতে। আমি দ্রুত নিয়ে যাই। পরে শুনি ঘটনাস্থলে এনসিপির আরও কয়েকজন নেতা ছিলেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাজু ‘শুধু কথাকাটাকাটি’ হয়েছে বলে দাবি করেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ঘটনার সময় নেতার বুকে সরাসরি লাথি মারা হয়েছে যা কোনোভাবেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, এটি শুধু ব্যক্তিগত বিরোধ নয়, এটি একটি স্পষ্ট সাংগঠনিক সহিংসতা। প্রকাশ্যে সহকর্মীকে মারধর সংগঠনের নিয়ম বহির্ভূত ও অপরাধমূলক কাজ।
ঘটনাটি নিয়ে রাজশাহী জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গতকাল এমনি বসেছিলাম। সেখানে আসলে যেটি ঘটেছে সেটি দুজনের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। এটি এনসিপির কোনো মিটিং নয়। আমরা আসলে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করছি। যেভাবে নির্দেশনা আসবে সেভাবে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
অপরদিকে হাসপাতালে থাকা রাজশাহী জেলা এনসিপি আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী শামীমা সুলতানা মায়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ফিরোজ ভাইয়ের অসুস্থতার কথা শুনে আমি রাত ১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেলে যাই। তখন ফিরোজ ভাইকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)তে নেয়া হয়। আজ বিকেল ৩টার দিকে আইসিইউ থেকে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ৫২ নম্বর বেডে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তবে কি ঘটেছিল সেটি নিয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমি বর্তমানে তার সাথে হাসপাতালেই আছি।’
এদিকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও রাজশাহীর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ওমর ফারুক বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি গতকাল তাদের ইন্টারনাল মিটিং হয়েছে। তবে মিটিংয়ে কি ঘটেছে বিস্তারিত জানি না। তবে কেউ যদি এমন কিছু করে থাকে, তাহলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংগঠনের নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কারও জন্যই ছাড় হবে না।’
ঘটনার জেরে এনসিপির রাজশাহী জেলা ইউনিটে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এই ধরনের অপরাধমূলক আচরণ দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কিনা এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দল কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।