Logo

সারাদেশ

নীলফামারী পাট উন্নয়ন কার্যালয়, ৭ পদের মধ্যে ৬ পদই শূন্য

Icon

নীলফামারী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১১:৫৩

নীলফামারী পাট উন্নয়ন কার্যালয়, ৭ পদের মধ্যে ৬ পদই শূন্য

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জনবল সংকটে ধুঁকে ধুঁকে মরছে নীলফামারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ওই কার্যালয়ের স্ট্র্যাপ প্যাটেন্ট অনুযায়ী মঞ্জুরীকৃত সাত পদের মধ্যে ছয় পদেই শূন্য থাকায় দৈনন্দিন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে।

জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মঞ্জুরীকৃত পদগুলো হলো, মুখ্য পাট পরিদর্শক একজন, পরিদর্শক একজন, সহকারী পরিদর্শক দুইজন, অফিস কাম কম্পিউটার অপারেটর একজন ও অফিস সহায়ক একজন (পিয়ন)। তবে কর্মরত আছেন একজন পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা। তাই জনবল সংকটের প্রভাব পড়ছে জেলায় পাট ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, পাট চাষি ও উৎপাদনের ওপর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, আমাদের মাসে ৩-৪টি মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনা করার কথা থাকলেও জনবল সংকট ও পরিবহন সংকটের কারণে এসব কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে বাজারে পাটজাত দ্রব্যের চেয়ে পলিথিনের ব্যবহার বেশী হচ্ছে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী পাট পণ্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে ব্যস্ত। এসব দেখারও কেউ নেই।

নীলফামারী পৌর শহরের হাড়োয়া মৌজার পাটচাষি বাবুল হোসেন জানান, ‘আমি যতটুকু জানি, উপজেলা কৃষি অফিস, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে প্রচুর লোকজন আছে, কিন্তু পাট উন্নয়ন অফিসের লোকজন আছে কি না, তা ঠিক জানি না।

জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের পাট চাষি আশরাফ আলী, আইয়ব আলী ও তাইজুল ইসলাম জানান, ‘পাট চাষ, বীজ উৎপাদন, সার, বীজ বিতরণ, বাজারজাতকরণ ও চাষিদের প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও জনবল সংকটে সঠিক সময় তা করা সম্ভব হয় না। এতে, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা।’

সূত্র জানায়, মুখ্য পাট পরিদর্শক পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অথচ এই অফিসে পদটি শূন্য পড়ে আছে। পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার পরের স্থানটি হলো মুখ্য পাট পরিদর্শক। অফিসের রেভিনিউয়ের যে কাজগুলো হয়,সেটি মুখ্য পরিদর্শকের কাজ।

এছাড়াও ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দেয়া, বিক্রয় ও বিপণন কাজে সহায়তা করা এবং কৃষকদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। জনবল না থাকায় এসব কাজও পাট উন্নয়ন কর্মকর্তাকে করতে হয়। এদিকে, সহকারী পরিদর্শক পদে দুইজন, অফিস কাম কম্পিউটার পদটি মঞ্জুরীকৃত পদ হলেও অদ্যাবধি নিয়োগ প্রদান করা হয়নি। এছাড়াও, অফিস সহায়ক (পিয়ন) ও নাইট গার্ড পদ সৃষ্টি করা হয়নি।

ওই অফিসের পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা এটিএম তৈবুর রহমান বলেন, ‘পাট অধিদপ্তরে জনবল সমস্যা একটি বড় ধরনের সমস্যা। মঞ্জুরীকৃত পদে পদায়ন করা হলে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মনিটরিংসহ অন্যান্য কাজ করা সহজ হতো। মোবাইল কোর্টে কর্মকর্তাদের যাতায়াতে যানবাহনের নেই কোনো সুব্যবস্থা। মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শনে গেলে ভ্যানে কিংবা অটোরিকশায় চেপে যেতে হয়। জনবল সংকটে অনেক পেছনে পড়ে আছি আমরা।’

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম বলেন, ‘পাটজাত দ্রব্যের বিপণন ও উৎপাদন নিয়ে কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকের মাঝে বিনা মূল্যে সার, বীজ ও কৃষি উপকরণ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। তবে তাদের বেহাল দশা আগে জানতাম না। কাজের পরিধি ও কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করা জরুরি। বিষয়টি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা উচিত।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘ওই কার্যালয়ের মঞ্জুরীকৃত পদ কয়টি ও সেখানে কর্মরত আছেন কতজন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।’

রংপুর বিভাগীয় পাট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এডি) সাইফুর রহমান বলেন, ‘জনবল সমস্যা শুধু নীলফামারীর নয়, এটি সারাদেশে। বিষয়টি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালায়কে জানানো হয়েছে।’

উল্লেখ্য, সারাদেশে (৬৪ জেলায়) ৬০৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপরীতে ১৭৬ জন কর্মরত আছেন।

তৈয়ব আলী সরকার/এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর