Logo

সারাদেশ

বাপ-বেটার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ, বাগেরহাটের হালিশহরে অসন্তোষ

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০:১১

বাপ-বেটার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ, বাগেরহাটের হালিশহরে অসন্তোষ

নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে কখনও মঞ্চে, কখনও সরকারি দপ্তরে দাপট দেখাতেন ক্ষিতীশ চন্দ্র বালা। আর এখন ছেলে সবুজ কুমার বালা পরিচয় দিচ্ছেন বিএনপি কর্মী হিসেবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষিতীশ ও সবুজ এখন চাঁদা দাবি করছেন অনেকের কাছে। বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের হালিশহর গ্রামজুড়ে এই ‘বাপ-বেটা’কে নিয়ে এখন চরম অসন্তোষ। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বিএনপি নেতারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এই দুজনের সঙ্গে দলটির কোনো সম্পর্ক নেই।

ক্ষিতীশ চন্দ্র বালার এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ শওকত হোসেন থেকে শুরু করে প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান পর্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ক্ষিতীশ বালা সম্পর্কে এমন অসংখ্য অভিযোগ বহু আগে তাদের কাছে পড়েছে বলে জানান।

হালিশহরের স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষিতীশ বালা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে ‘কলুষিত’ করে এলাকায় প্রভাব খাটিয়েছেন। বিভিন্ন অফিসে তদবির করে সুবিধাও নিয়েছেন। এমনকি নিয়োগে ‘নয়-ছয় করে’ ছেলেকে প্রাইমারি স্কুলে ‘দপ্তরি কাম প্রহরী’ পদে চাকরিও পাইয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি সরকার পরিবর্তনের পর বাবা-ছেলে পরিচয় পাল্টে এলাকায় বিএনপি কর্মী সেজে চাঁদা তোলা শুরু করেছেন। তবে বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলছেন, ক্ষিতীশ বালা ও সবুজ বালার দলটির কোনো ইউনিট বা কমিটিতেও নেই।

সবুজ বালার চাঁদা দাবির একটি অডিও ক্লিপ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে তাকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা চাইতে শোনা যায়। এক পর্যায়ে পুলিশি হয়রানির ভয় দেখিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘তোমারে ধরায় দিলি তোমার ধারদে (কাছ থেকে) ৪ হাজার নেবে (পুলিশ), সেখান থেকে আমাদের ২ হাজার দিয়ে যাবে। ঝামেলা মুক্ত।’

অডিও রেকর্ডটি স্বাধীনভাবে যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সবুজ বালা এই ধরনের হুমকি ও দাবির মাধ্যমে একাধিক বাড়িতে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করেছেন।

অডিও রেকর্ডে সবুজকে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের নাম ব্যবহার করে দাবি করতে শোনা যায়, তিনি তাদের পক্ষে চাঁদা তুলছেন। তবে যাদের নাম তিনি বলেছেন, তারা জানিয়েছেন, এসব ঘটনার সঙ্গে তারা মোটেও জড়িত নন। বরং তারা দাবি করেন, সবুজ তাদের নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষিতীশ ও সবুজ বালার নামে বাগেরহাট ও চিতলমারীর বিভিন্ন এনজিওতে একাধিক ঋণ রয়েছে। এখন চাঁদা তুলে কিস্তির টাকা পরিশোধের চেষ্টা করছেন তারা। আদালত সূত্রে জানা গেছে, সবুজ বালার নামে নারী নির্যাতন ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা চলমান।

সবুজ বালার বিরুদ্ধে ওঠা চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি এখন শুনলাম। অডিও রেকর্ড বা অন্য কোনো উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া গেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে বাগেরহাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহামুদুল-উল হাসান বলেন, ‘পুলিশের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো বেআইনি। অডিওটি যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের নাম ভাঙিয়ে কেউ সুনাম ক্ষুণ্ণ করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

অভিযোগকারীদের একজন, যিনি পরিচয় গোপন রাখতে অনুরোধ করেছেন, বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো মামলা নেই, কেউ কোনো অভিযোগও কখনো করেনি। তবু সবুজ চাঁদা চাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। ১৫০০ টাকা নিয়ে নিয়েছে, এখন আরও ৫ হাজার টাকা দাবি করছে। ওদিকে আমার মা অসুস্থ, ওষুধ কেনার পর্যন্ত টাকা নেই।’

গ্রামের একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, ক্ষিতীশ বালা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে কলুষিত করেছেন বছরের পর বছর। তাদের ভাষ্য, ক্ষিতীশ এতদিন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়ে দাপট দেখিয়ে বহু মানুষকে হয়রানি করেছেন। তারা মূলত মোড়েলগঞ্জের দক্ষিণ বারইখালি এলাকার বাসিন্দা। সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে এখানে এসে আবার সেই একই কাজ শুরু করছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ শওকত হোসেন ক্ষিতীশ বালা সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি সুবিধাবাদী লোক। এর আগে মোড়েলগঞ্জ ছিলেন। এলোপ্যাথি ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিতেন। সেখান থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। ওনার বিরুদ্ধে এমন আরও অভিযোগ আমার কাছে আগে এসেছিল। একজন মুক্তিযোদ্ধার এসব কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত।’

ক্ষিতীশ বালা সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আগে উনি মোড়েলগঞ্জ থাকতেন। নিজের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় কলুষিত করে গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সেজে বিভিন্ন মানুষকে হয়রানি করেছেন। তার এক ভাইপো একবার ধর্ষণচেষ্টার মামলায় পড়েন। এই তথ্য পেয়ে আমরা সংবাদ করতে যাই। তখন ক্ষিতীশ বালার ঔদ্ধত্য আমাদের বিস্মিত করে। আমরা বিভিন্ন সময় জেনেছি, তিনি লোকজনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেন।’

চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে সবুজকে অন্তত ১৫ বার ফোন করেন এই প্রতিবেদক। কল রিসিভ করে কথা বলেন না। শেষবার অভিযোগের বিস্তারিত বলার পর শুধু বলেন, ‘এসব মিথ্যা।’

অন্যদিকে ক্ষিতীশ  চন্দ্র বালাকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

এইচকে/এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

চাঁদাবাজি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর