মামলা দেওয়ায় নিজের মোটরসাইকেলে আগুন দিলেন চালক

বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১৪:৫৩

বরগুনায় মামলায় দেওয়ায় নিজের মোটরসাইকেলে আগুন দিলেন চালক।
বরগুনায় ট্রাফিক পুলিশের দেওয়া মামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়েছেন এক ভাড়ায় চালিত (রেন্ট-এ-কার) মোটরসাইকেল চালক।
রোববার (৬ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বরগুনা শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকার ট্রাফিক বক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী চালকের নাম নজরুল ইসলাম। তিনি পৌর শহরের উকিলপট্টি এলাকার বাসিন্দা এবং বরগুনা-পুরাকাটা রুটে মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নজরুল ইসলাম তার স্ত্রীর ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য সকালে ক্লিনিকে নিয়ে যান। তবে ভুল করে টাকা না নেওয়ায় তিনি বাসা থেকে টাকা আনতে ক্লিনিক থেকে বের হন। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ তাকে কাগজপত্র না থাকায় আটকায় এবং মামলা দিতে চায়। পরে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ছেলেকে বাসায় পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনান। বাসা ঘটনাস্থল থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে হলেও পুলিশ মামলা দিয়ে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
তবে পুলিশ জানায়, মোটরসাইকেল চালক নজরুলকে কাগজপত্রের কারণে কোনো মামলা দেওয়া হয়নি। হেলমেট না থাকায় তাকে মামলা দেওয়া হয়েছে।
নজরুলের স্ত্রী বলেন, ‘আমি খুব অসুস্থ। ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য আমাকে নিয়ে ক্লিনিকে গিয়েছিল। পরে টাকা আনতে বাসায় আসার সময় কাগজপত্র না থাকায় পুলিশ তাকে মামলা দিতে চায়। বাসা কাছাকাছি থাকায় ছেলেকে পাঠিয়ে কাগজ আনালেও পুলিশ মামলা দিয়েছে। একদিকে আমি অসুস্থ, তার মধ্যে এমন অমানবিক ঘটনার বিচার চাই।’
ভুক্তভোগী মোটরসাইকেল চালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্ত্রী অসুস্থ। তাকে ক্লিনিকে রেখে বাসার দিকে আসছিলাম। তখন কাগজ না থাকায় পুলিশ আমাকে আটকায়। এখান থেকে বাসার দূরত্ব ২-১ মিনিটের পথ। ছেলেকে পাঠিয়ে আমি সকল কাগজ আনালেও তারা আমাকে মামলা দেয়। এমনকি আমি স্ত্রীর অসুস্থতার কথা বললে তারা বলে, ‘স্ত্রী অসুস্থ তাতে কী, আপনি তো অসুস্থ না।’ পরে আমার স্ত্রী এখানে আসলেও তার আকুতি-মিনতি পুলিশ শোনেনি।’
কর্তব্যরত সার্জেন্ট শাহাবুদ্দিন বলেন, আমি মাছবাজারের সামনে দায়িত্বরত ছিলাম। তখন হেলমেট ছাড়া যেতে দেখে ইশারা দিই। কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি কাগজ আনতে সুযোগ চান। পরে তার নাম-ঠিকানা রেখে কাগজ আনার সুযোগ দেওয়া হয়। কাগজপত্র নিয়ে এলে তাকে কাগজের কোনো মামলা দেওয়া হয়নি। কিন্তু হেলমেটের জন্য তাকে মামলা দেওয়া হয়। এতে রাগে ও ক্ষোভে তিনি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ খবর শুনে তার স্ত্রী চলে আসেন।
এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘কাগজপত্র দেখানো সত্ত্বেও মামলা দেওয়া হয়েছে—এ কথা সঠিক নয়। কারণ, কাগজ থাকা সত্ত্বেও হেলমেট না পরা, রং পার্কিং করা বা উল্টো পথে চালানোর মতো কারণে মামলা হয়। এটি আইনে রয়েছে। সুতরাং তাকে যে মামলা দেওয়া হয়েছে, তা আইনসঙ্গতভাবেই দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া একটি আইনগত অপরাধ। তবে যেহেতু তার স্ত্রী অসুস্থ এবং তিনি একজন রেন্ট-এ-কার চালক ও নিজের কর্মের জন্য অনুতপ্ত। তাই আমরা তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো আইনগত প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি না। তিনি আমার বরাবর ভুল স্বীকার করে আবেদন করেছেন। তাই মুসলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
খান নাঈম/এমবি