বিএনপি চাঁদা তোলে না এমন কোনো জায়গা নেই : ফয়জুল করিম

রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৪:৫৩

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। ছবি : বাংলাদেশের খবর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেছেন, আজকে বিএনপির চাঁদাবাজির অবস্থাটা কী? এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে চাঁদা তোলে না বিএনপি। আমরা প্রতিদিন খবরের কাগজে দেখছি। এগুলো সামান্য—বরফের ওপরের অংশ যা দেখা যায়, নিচে তার চেয়ে অনেক বেশি থাকে। যতটুকু প্রকাশ পায়, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি তারা চাঁদাবাজি করছে।
রোববার বিকেলে রাজশাহী মহানগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইসলামী আন্দোলনের এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুফতি ফয়জুল করিম বলেন, আওয়ামী লীগের সমস্ত সম্পত্তি দখল করেছে কে? এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি কার কাছে? এস আলমের গাড়ি কার কাছে? খুঁজে দেখেন। আমার খোঁজার দরকার নেই। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকা কারা ভারতে পাচার করেছে?
তিনি বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত শুধু দেখেছি খাম্বা কেস, কারেন্টের খাম্বা কেস, ট্রান্সফার কেস, হাওয়া ভবন। কত ভবন আমরা দেখেছি। এখন দেখছি ৯ মাসে ১৫০ খুন। চাঁদা নেয় পল্টনে, চলে যায় লন্ডনে। শুনি, এটা আমার বক্তব্য না, এটা পাবলিক বলতেছে।’
বিএনপিকে কেন মানুষ ভোট দেবে, সে প্রশ্ন তুলে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, আমাকে একটা বক্তব্য শোনান, যে বক্তব্যের কারণে বিএনপি ভোট নেবে। একটা ন্যারেটিভ আমাকে দেন। একটা যুক্তি আমাকে প্লেস করুন, যে যুক্তিতে মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে। বিএনপি ১৯৯১–৯৬ সালে ক্ষমতায় ছিল। যে বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৫ সালে ক্ষমতায় ছিল, সেই বিএনপি ১৯৯৬ কিংবা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেনি কেন? বিপুল ভোটে হেরেছে কেন? বিএনপিকে ভোট দেওয়ার একটা কারণ আপনি দেখাতে পারবেন না। যদি বলেন উন্নয়ন, উন্নয়ন—এর চেয়ে হাজার গুণ বেশি উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ। হাজার গুণ বেশি।
ফয়জুল করিম বলেন, ‘বিএনপি ভাবছে, বিগত দিনে এত ভোট পেয়েছে, আগামীতেও এত ভোট পাবে। তা বিগত দিনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ গঠন হয়েছে, এই দেশ স্বাধীন হয়েছে—তারা ভারতে পালিয়েছে কেন? বিগত দিনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, আজকে ক্ষমতায় নেই কেন? বিগত দিনে বিএনপি ভোট পেয়েছে, আগামীতেও পাবে—সেই চিন্তায় আছে। কেন মানুষ ভোট দেবে? ওই যে ভোলাতে স্বামীকে আবদ্ধ করে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করার জন্য? কেন ভোট দেবে বিএনপিকে, আমাকে বলুন। ওই যে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় সমস্ত পুলিশদের মারার জন্য? লুট করার জন্য? ভাঙচুর করার জন্য? আমি তো বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলি না। যারা সাংবাদিক আছেন, মিডিয়া আছে, তারা কথা বলে। আমি শুধু শুনাইয়ে দিই।’
‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে না’—এই বক্তব্য সবচেয়ে বেশি বিএনপির। বিএনপি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার জন্য, ইনক্লুসিভ নির্বাচনের সবচেয়ে বেশি বক্তব্য দিয়েছে।
তিনি বলেন, কেউ ইসলাম প্রতিষ্ঠার ঐকমত্য কায়েম করতে চায়, কেউ আমেরিকান গণতন্ত্রবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কেউ ভারতের পক্ষে, কেউ ভারতের বিপক্ষে। দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে বাংলাদেশ। দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে গেছে। আগামী নির্বাচনে কী অবস্থা হবে? কারা ভোট পাবে? কথা ক্লিয়ার—যারা সুশাসন কায়েম করতে পারবে, তারা ভোট পাবে। যারা সুশাসন কায়েম করতে পারবে না, তারা ভোট পাবে না। ক্লিয়ার কাট কথা।’
আগামীর দেশ হবে ইসলামের—উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামীর দেশে ইসলাম ক্ষমতায় যাবে ইনশাআল্লাহ। কোনো চোর, বাটপার, গুন্ডা, চাঁদাবাজ, মাস্তান এবং খুনিদের দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় নেবে না। যেখানে জুলুম থাকবে না, অত্যাচার, অবিচার, খুন, লুট, চাঁদা থাকবে না, খুন হবে না, গুম হবে না। মা-বোনেরা রাস্তায় নামবে, ইজ্জতহানি হবে না। বাংলাদেশের এই জনগণ গোলামি চুক্তিতে আবদ্ধ হবে না।’
এই মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি শেখ মুহাম্মদ নুরুন নাবী, রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির ড. কেরামত আলী, ইসলামী আন্দোলন রাজশাহী মহানগরের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদ। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগরের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদ।
এমবি