টেকনাফে টানা বর্ষণে প্লাবিত অর্ধশতাধিক গ্রাম, দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৯:৩৩
-686bcc954ab25.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় টানা ভারী বর্ষণে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা ও মানবিক সংকট। কয়েক দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতে উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া একটানা বৃষ্টিতে অনেক এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে যায়। শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজারে সর্বোচ্চ ১৪৬ মিলিমিটার এবং টেকনাফে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
সোমবার (৭ জুলাই) সকাল থেকে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি হয়েছে মানুষ। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে দুশ্চিন্তা ও হতাশা বাড়ছে।
উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাহাড়ি ও নিচু এলাকা ঘেরা টেকনাফের ছয়টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় ৫০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের আটটি, হ্নীলা ইউনিয়নের ১২টি, টেকনাফ পৌরসভার সাতটি, সদর ইউনিয়নের ছয়টি, সাবরাংয়ের আটটি ও বাহারছড়া ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, “বিশেষ করে হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব রঙ্গিখালী এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রায় ৩০০ পরিবার পানিবন্দি। খাল দখলের কারণে পানি নামছে না। আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছি।”
রঙ্গিখালী এলাকার বাসিন্দা রহিম উল্লাহ বলেন, ‘ঘরের ভেতর কোমর পর্যন্ত পানি। রান্না করা যায় না। ছোট ছোট বাচ্চারা কষ্টে আছে। কিছু জায়গায় সাপও ঢুকে পড়েছে। এটা এক ধরনের ছোটখাটো বন্যা।’
শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া ও মাঝের পাড়া এলাকা থেকেও পানিবন্দি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মাঝের পাড়া এলাকার বুশরা খাতুন বলেন, ‘ঘরের চালা ফুটো, ভেতরে পানি পড়ছে। বাচ্চাদের নিয়ে কী করবো বুঝতে পারছি না। খাবার নেই, জ্বালানি নেই, শুধু পানি আর কাদা।’
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, টেকনাফে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও দুর্ভোগ স্বাভাবিক হলেও খাল দখল, অনিয়ন্ত্রিত পাহাড়ি বসতি এবং দুর্বল অবকাঠামো এই সমস্যাকে আরও ভয়াবহ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর থেকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে খাল উদ্ধার ও টেকসই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই সংকটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে।
সাবরাং ইউনিয়নের দক্ষিণ নয়া পাড়া বাসিন্দা আবদুল সামাদ জানান, ‘পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টির কারণে নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। অনেকেই রান্না করতে পারছে না। অনেকে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। আমরা এখন সাহায্যের অপেক্ষায় আছি।’
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরানোর জন্য মাইকিং করা হয়েছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শুকনো খাবার বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।’