ইলিশের দেখা নেই, বৈরী আবহাওয়ায় বিপাকে উপকূলের জেলেরা

জাকারিয়া জাহিদ
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ১৪:১০

নিষেধাজ্ঞার অবসান হয়েছে প্রায় এক মাস আগে; কিন্তু ইলিশের দেখা নেই বললেই চলে। উপরন্তু দফায় দফায় বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরা তো দূরের কথা, ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও পারছেন না উপকূলের জেলেরা। একদিকে সমুদ্রযাত্রার আগে বাজার সদাইয়ের খরচ, অন্যদিকে বারবার ঘাটে খালি হাতে ফিরে আসা—সব মিলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পটুয়াখালীর আলীপুর-মহিপুর মৎস্য বন্দরের হাজারো জেলে-আড়ৎদার।
গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের সামুদ্রিক মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা ছিল সরকারের। জেলেরা আশায় ছিলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশের মৌসুমে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। সাগরে একের পর এক নিম্নচাপ, লঘুচাপ, মৌসুমি ঝড়—সব মিলিয়ে ট্রলার ভরেও বারবার ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে।
আলীপুর মৎস্য বন্দরের আড়ৎদার আবুল হোসেন কাজী বলেন, একেকটা ট্রলার সাগরে পাঠাতে কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু সাগরে গিয়ে আবহাওয়ার কারণে ফিরে আসে দিন দুয়েকের মধ্যে। প্রতিবারই লোকসান গুনতে হচ্ছে। ঋণের দায়ে পড়ে যাচ্ছি।
‘মায়ের দোয়া’ নামের একটি মাছ ধরার ট্রলারের মাঝি ইউসুফ বলেন, ৫৮ দিনের অবরোধ শেষে ভাবছিলাম কিছু আয় রোজগার হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত লাভ তো দূরে থাক, পুঁজি বাঁচাতে পারছি না। বারবার সমুদ্রে গিয়ে ফিরে আসছি। আর কতো দিন পারব জানি না।
শুধু জেলেরা নন, ক্ষতির মুখে আড়ৎদাররাও। আলীপুর মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি জলিল ঘরামী (মনি ফিশ) বলেন, গত চার বছর ধরে আমরা শুধু লোকসান করছি। লাখ লাখ টাকা দাদন দিচ্ছি, কিন্তু সে অনুযায়ী মাছ নেই। এইভাবে চললে আর কতোদিন টিকব?
মহিপুর আড়ৎদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমন দাস বলেন, বাজারে ইলিশের দাম চড়া, কিন্তু জোগান নেই। জেলেরা সমুদ্রে নামতেই পারছে না, মাছ পাচ্ছে না—আমরাও ব্যর্থ হচ্ছি।
জেলেদের এই দুরবস্থা নিয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন দৃশ্যমান। সাগরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বারবার। লম্বা জালে কিছু ইলিশ ধরা পড়লেও ভাসান জাল, কালো কট বা লাল জালের জেলেরা আশানুরূপ মাছ পাচ্ছেন না। আশা করছি আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
আপাতত সে আশাতেই বুক বেঁধে আছেন জেলেরা। তবে দাদনের দায়, ঋণের চাপে অনেকেই পেশা বদলের কথা ভাবছেন। উপকূলের অর্থনীতির বড় একটি খাত এই মৎস্যজীবীদের ওপর নির্ভরশীল। তাদের এমন সংকট কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর প্রভাব পড়তে পারে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও।
- এটিআর