Logo

সারাদেশ

পাথর মেরে হত্যা, বিচার চেয়ে কাঁদছে সোহাগের পরিবার

Icon

বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১৬:৪২

পাথর মেরে হত্যা, বিচার চেয়ে কাঁদছে সোহাগের পরিবার

ছবি : বাংলাদেশের খবর

‘আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি। বাবা আর নেই। যারা বাবাকে মেরেছে, তাদের ফাঁসি চাই’—হাত উঁচিয়ে চোখ ভেজা কণ্ঠে বলছিলেন ৯ বছরের সোহান। পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত সোহানা ফিসফিস করে বলে উঠলেন, ‘আমার বাবা ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি কারও টাকা নেননি, চাঁদা দেননি—এটাই কি তার অপরাধ?’

বুধবার দুপুরে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে পাথর মেরে হত্যা করা হয় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগকে (৩৯)। ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে শনিবার (১২ জুলাই) বরগুনা শহরে মানববন্ধনে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়।

সকাল ১১টায় শুরু হওয়া মানববন্ধনে শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে স্লোগান তোলেন—`চাঁদাবাজদের রক্ষা নয়, খুনিদের বিচার চাই'।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘এই ঘটনা শুধুই একটি খুন নয়, এটি বাংলাদেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতির ওপর আরেকটি রক্তাক্ত দাগ। এখানে ভাইরাল না হলে বিচার হয় না, ভাইরাল না হলে রাষ্ট্র নড়েও না। আমরা চাই, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন ভাইরালের অপেক্ষায় না থাকে।’

তারা বলেন, ‘চাঁদাবাজদের দলীয় পরিচয় থাকলে যখন ধরা পড়ে, তখন দল তাদের বহিষ্কার করে মুখ বাঁচায়। কিন্তু হত্যার সময় তারা কাদের ছত্রছায়ায় ছিল—সেটি জানতেই চায় মানুষ।’

সোহাগের স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, `দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামীর পেছনে লেগেছিল চাঁদাবাজরা। প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা চাইতো। আমার স্বামী চাঁদা দেয়নি, তাই তাকে মেরে ফেলেছে। আমি বিচার চাই। যারা ওকে মেরেছে, তারা যেন কখনও মুক্ত না পায়।'

সোহাগের বোন ফাতেমা বেগম বলেন, ভাই ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছিল। কেউ তার দোকানটা সহ্য করতে পারছিল না। একদিন ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে মেরে ফেলল। এ দেশ কি চাঁদা না দিলে এমন পরিণতি দেয়?

সোহাগের মামা মন্টু মিয়া বলেন, এই হত্যাকাণ্ড পশুত্বকেও হার মানিয়েছে। পাথর মেরে মাথা থেঁতলে কে কাউকে মারে? এটা যদি খোলাখুলি না হয়, তাহলে কোনটা হবে?

মানববন্ধনে বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান—‘এই হত্যার বিচার যেন নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। খুনিদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এনে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। বিচার না হলে মানুষ মনে করবে, চাঁদা না দিলে মরে যেতে হবে।’

বরগুনার এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘আজ সোহাগ মরেছে, কাল হয়তো আমাদের এলাকার কাউকে খুন করা হবে। এই বিচারহীনতার চক্র ভাঙতে হবে। এই দায় শুধু খুনিদের নয়, সমাজেরও।’

এআরএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মানববন্ধন হত্যা / খুন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর